সৌদি আরবের জেদ্দায় পরশু আইপিএলের মেগা নিলাম শেষেই প্রশ্নটি উঠেছে—কে? মানে, কলকাতা নাইট রাইডার্সে অধিনায়কের দায়িত্ব পাবেন কে?
কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ভেঙ্কি মাইশোরের উত্তর হলো, সবাই মিলে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সে তো বটেই। তবে কলকাতার ২০২৫ আইপিএল স্কোয়াডে তাকিয়ে আন্দাজ করে নেওয়ার সুযোগ তো আছে। ২১ জনের এই স্কোয়াডে টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের অতীত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটার কিন্তু আছেন।
সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কেন এই প্রশ্ন উঠল, সেই পটভূমিতেও তাকানো প্রয়োজন। নাইটদের ১০ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে গত মে মাসে তৃতীয় আইপিএল শিরোপা এনে দিয়েছিলেন অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার।
কিন্তু এর কয়েক মাস পরই ২০২৫ আইপিএলের জন্য কলকাতার খেলোয়াড় ধরে রাখার তালিকায় শ্রেয়াসকে না দেখে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। ভেঙ্কি মাইশোর জানিয়েছিলেন, কলকাতা তাঁকে ধরে রাখতে চাইলেও শ্রেয়াস নিজেই থাকেননি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তখন জানিয়েছিল, বেতনই শ্রেয়াসের নাইটদের তাঁবু ছেড়ে যাওয়ার কারণ। সেই শ্রেয়াসকে এবার নিলামে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। কিন্তু দরের পাল্লায় পাঞ্জাব কিংসের সঙ্গে পারেনি। ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে তাঁকে নিয়ে নেয় পাঞ্জাব কিংস।
এবারের নিলামে কলকাতা কিন্তু তাদের আরও এক সাবেক অধিনায়ককে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল—২০২৩ আসরের অধিনায়ক নীতীশ রানা। শ্রেয়াসের মতো তাঁকেও কলকাতা ছেড়ে দিলেও এবারের নিলামে নীতীশের নাম ওঠার পর কলকাতা তাঁকে ফেরাতে আরটিএম (রাইট টু ম্যাচ) কার্ড ব্যবহার না করায় অবাক হয়েছেন বিশ্লেষক থেকে সমর্থকদের অনেকেই।
নিলামের সম্প্রচারকদের সঙ্গে আগামী মৌসুমের অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন ভেঙ্কি মাইশোর। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অংশীদার এবং নীতিনির্ধারকেরা মিলে আলোচনায় বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন, ‘সত্যি বলতে, আমাদের আলোচনায় বসে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে হবে। কখনো কখনো এমন হয়, সবকিছু করার পর পেছন ফিরে গোটা ব্যাপারটায় তাকাতে হয়। অংশীদারেরা ও নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ এখানে (জেদ্দায়) থাকবে না। তাই আমরা সবাই মিলে বসে ভালোভাবে আলোচনা করব। আমি নিশ্চিত, ভালো একটি সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে।’
শ্রেয়াস ও নীতীশকে ছেড়ে দেওয়ার পর কলকাতা নিশ্চয়ই তাদের আগামী মৌসুমের নেতৃত্ব নিয়ে ভেবেছে। নিলামেও যে এ বিষয়টি কলকাতার নীতিনির্ধারকদের মাথায় ছিল, সেটি বোঝা যায় ভেঙ্কির কথায়। নইলে ২০২৫ আইপিএলের জন্য ২১ জনের স্কোয়াড নিয়ে ভেঙ্কি এতটা সন্তুষ্টি হয়তো প্রকাশ করতেন না, ‘আমার মনে হয়, (নিলামে) নিজেদের পরিকল্পনায় অটল থেকে গোটা দলই দারুণ কাজ করেছে। এটাই আসল কৌশল। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা যেসব দিক ভাবনায় রেখে দলটা যেভাবে গোছাতে চেয়েছি, সেটা করতে পেরে খুব খুশি লাগছে।’
কলকাতার অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের নামটি বেশি উঠে আসছে। ২০২১ সাল থেকে তিনি কলকাতায় খেললেও এবার নিলামের আগে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল নাইটরা। কিন্তু নিলামে রাজস্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই অলরাউন্ডারকে চড়া দামে (২৩ কোটি ৭৫ লাখ রুপি) তারা কেনায় অনেকেরই ভ্রু কুঁচকেছে।
ভেঙ্কটেশ টি–টোয়েন্টির কার্যকরী খেলোয়াড়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁকে ছেড়ে দিয়ে এত দামে কেনার পেছনে কি অধিনায়কের শূন্যস্থান পূরণের ব্যাপারটিও ভেবেছে কলকাতা? এই প্রশ্নও উঠেছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, নিলামে কলকাতা তাঁকে কেনার পর ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অধিনায়কত্ব নিয়ে ভেঙ্কটেশ কথাও বলেছেন, ‘নীতীশ রানার (২০২৩ সালে) অনুপস্থিতিতে আমি দলের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পেয়েছি, যখন সে দুর্ভাগ্যজনকভাবে চোটে পড়েছিল। এ ছাড়া আমি সহ–অধিনায়কও ছিলাম।’
ভেঙ্কটেশ আরও বলেছেন, ‘সব সময় বিশ্বাস করা হয় অধিনায়কত্ব স্রেফ একটি ট্যাগ। কিন্তু নেতৃত্ব হলো এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সবাই দলের জন্য খেলার তাড়না অনুভব করতে পারে। এই দায়িত্ব (অধিনায়কত্ব) দেওয়া হলে আমি আনন্দের সঙ্গেই তা পালন করব। অবশ্যই (আমি প্রস্তুত)। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে শিরোপা ধরে রাখার চেষ্টা করব এবং জয়ের ধারা বজায় রাখব।’
তবে কলকাতার দায়িত্ব নেওয়ার মতো ভেঙ্কটেশ ছাড়াও আরও কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন। যেমন আজিঙ্কা রাহানে। তাঁকে ১ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে ফিরিয়ে এনেছে কলকাতা। ঘরোয়া ক্রিকেটে রাজ্য দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ৩৬ বছর বয়সী রাহানের। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১১ ম্যাচে ভারত জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও করেছেন। ১৯৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাহানের বয়স ও পরিপক্বতা কলকাতার অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে পেছনে ফেলতে পারে ২৯ বছর বয়সী ভেঙ্কটেশকে।
কেউ কেউ আবার সুনীল নারাইনের কথাও বলছেন। ক্যারিবিয়ান এ অলরাউন্ডার ২০১২ সাল থেকে নাইটদের। তিনি অনেকটা ‘ঘরের ছেলে’ বনে গেছেন। নাইটদের চিন্তাভাবনা তাঁর চেয়ে ভালো জানেন আর কে!
এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে নারাইনের। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেটে লস অ্যাঞ্জেলেসে নাইট রাইডার্সের অধিনায়কত্ব করেছেন। আরব আমিরাতে গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি–টোয়েন্টিতে ছিলেন আবুধাবি নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক।
কিন্তু একটি প্রশ্ন এসেই যায়, আইপিএলে নারাইনের কাছ থেকে ব্যাটে–বলে পারফরম্যান্স পায় কলকাতা। অধিনায়কত্বের বাড়তি চাপ তাঁর এই পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে, এমনটা ভেবেও নারাইনকে অধিনায়কত্ব না–ও দিতে পারে দলটি।
আরেক ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলের নামও উঠে আসছে আলোচনায়। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের বিলুপ্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি জ্যামাইকা তালাওয়াসকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে রাসেলের। বিপিএলের ২০১৯–২০ মৌসুমে রাজশাহী রয়্যালস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁর নেতৃত্বেই।
কিন্তু রাসেল চোটপ্রবণ হওয়ায় এই ব্যাপারটা তাঁর অধিনায়ক হওয়ায় বাধা তৈরি করতে পারে। কলকাতা নিশ্চয়ই এমন কাউকে অধিনায়ক বানাতে চাইবে না, হুটহাট চোটের কারণে যাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে।
রিংকু সিংও ছিলেন আলোচনায়। তবে আইপিএলের বিশ্লেষকদের মতে, ২৭ বছর বয়সী রিংকু সিং কলকাতার অধিনায়ক হওয়ার মতো এখনো পরিণত হননি।