‘সারা দেশে একটি পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, গত কয়েক দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, এ ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের অপতৎপরতা উদ্বেগজনক হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আজ বুধবার রাতে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওই মন্তব্য করে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আমি দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকটি কথা বলতে চাই। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এক দিকে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে অধিকার বঞ্চিত মানুষের চাওয়া–পাওয়ার হিসাব, অপর দিকে পলাতক স্বৈরাচারের প্রতিশোধের আগুন—সব মিলিয়ে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি বিরাজমান। পলাতক স্বৈরাচার গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়মের পাহাড় তৈরি করেছিল, জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এখন স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে জনগণের দাবি আদায়ের এই আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।’
শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুরের ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনতার আন্দোলনে যেই শিক্ষার্থীরা সামনের কাতারে থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছিল, হঠাৎ করেই এখন তারা কেন একে অপরের বিরুদ্ধে এতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠল? জনমনে এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার এমন একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা কেন শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুর চালাবে? কেন আগুন ধরিয়ে দেবে? এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ ‘স্যাবোটাজ’ করছে কি না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে এবং পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন। সরকার পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে জনগণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা জনগণের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিন। জনগণকে আস্থায় রাখুন, জনগণের আস্থায় থাকুন। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর স্বৈরাচারবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। সরকারের কোনো কাজ কিংবা কথা যেন ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফাটল ধরার কারণ না হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।’
একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জনগণের যেকোনো অভাব–অভিযোগ যথানিয়মে সরকারের কাছে উপস্থাপন করলে ষড়যন্ত্রকারীরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সুযোগ পাবে না। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, সরকারকে আরেকটু সময় দিন, আরেকটু ধৈর্যের পরিচয় দিন। পরিস্থিতির ওপর সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখুন।’
বিবৃতিতে তারেক রহমান সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ‘দলমত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে।’