সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত আইপিএলের মেগা নিলামে সবচেয়ে বেশি অর্থ নিয়ে নেমেছিলেন প্রীতি জিনতা। তাঁর মালিকানাধীন দল পাঞ্জাব কিংসকে ঢেলে সাজাতে রেখে দিয়েছিলেন ১১০ কোটি ৫০ লাখ রুপি (১৫৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা)।
তবে হাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা থাকলেও নতুন আঙিকে পাঞ্জাবকে সাজিয়ে তোলা প্রীতির জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, নিলামের আগে তিনি মাত্র দুজন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছিলেন—ওপেনার প্রভসিমরান সিং ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শশাঙ্ক সিং। তাই তাঁকে নিলাম থেকে অন্তত আরও ১৬ জন খেলোয়াড় কিনতে হতো।
সেই কাজটা এবার বেশ বুঝেশুনেই করেছেন প্রীতি। জনপ্রিয় এই বলিউড অভিনেত্রী সর্বোচ্চ ২৫ খেলোয়াড় নিয়েই দল সাজিয়েছেন। এরপরও তাঁর তহবিলে অবশিষ্ট আছে ৩৫ লাখ রুপি। সব মিলিয়ে এবারের নিলাম থেকে বেশির ভাগ পছন্দের ক্রিকেটার কিনতে পেরে তিনি বেশ খুশি। ৪৯ বছর বয়সী এই তারকার মতে, তিনি যেমন দল চেয়েছিলেন, তার ৯০ শতাংশ আশা পূরণ হয়েছে।
জেদ্দার আবাদি আল-জোহর অ্যারেনায় কাল রাতে মেগা নিলাম শেষে সম্প্রচারকারী চ্যানেল স্টার স্পোর্টস ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জিও সিনেমাকে প্রীতি বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে শুরু করতে চেয়েছিলাম। সেটা করতে গিয়ে কিছু জায়গায় সফল হয়েছি, কিছু জায়গায় হতে পারিনি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেমন চেয়েছিলাম, তেমনই হয়েছে। নিলাম কখনোই এমন হয় না, যেখানে আপনি ১০০ শতাংশ সফল হবেন, যেসব খেলোয়াড়কে চেয়েছেন তাদেরই পাবেন। যদি ৯০ শতাংশের বেশি (পছন্দের খেলোয়াড়) পান, সেটা আপনার জন্য একটা দুর্দান্ত নিলাম হবে। আমরা যা চেয়েছিলাম, তার প্রায় ৯০ শতাংশ পেয়েছি।’
আইপিএলের সর্বশেষ মৌসুমে শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপরও আইয়ারকে ধরে রাখেননি প্রীতির অনেক জনপ্রিয় সিনেমার নায়ক শাহরুখ খান। সেই সুযোগ লুফে নিয়েছে প্রীতির পাঞ্জাব। দলটি আইয়ারকে কিনেছে ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে, যা তাঁকে আইপিএল নিলামের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের তালিকায় দুইয়ে নিয়ে এসেছে।
ভারতীয় দুই বোলারের পেছনেও বড় অঙ্কের টাকা ঢেলেছে পাঞ্জাব। বাঁহাতি পেসার অর্শদীপ সিং ও লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল-দুজনকে পেতে তারা ব্যয় করেছে ১৮ কোটি রুপি করে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস স্টয়নিসকে ১১ কোটি, দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো ইয়ানসেনকে ৭ কোটি রুপিতে কিনেছে পাঞ্জাব। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও তারা দলে ফিরিয়েছে চার বছর পর। তাঁকে পেতে খরচ করতে হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ রুপি।
পাঞ্জাবের ঘরের ছেলে অর্শদীপের সঙ্গে হারপ্রীত ব্রার ও নেহাল ওয়াধেরাকেও নিয়েছেন প্রীতি। স্থানীয় ক্রিকেটারদের ফেরাতে পেরে রোমাঞ্চিত এই অভিনেত্রী, ‘হ্যাঁ, ওরা ফিরে এসেছে। এ কারণে আমি খুব রোমাঞ্চিত। অর্শদীপ সিং অরিজিনাল পাঞ্জাবের ছেলে। এ ছাড়া হারপ্রীত ব্রার, নেহাল ওয়াধেরা এবং আরও অনেকেই আছে। একটা জিনিস আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম যে এবার সম্পূর্ণ নতুন আঙিকে, নতুন পদ্ধতিতে দল গড়ব। তবে আমরা এই অববাহিকার খেলোয়াড়দেরও দলে রাখতে চেয়েছিলাম।’
নতুন করে দল সাজাতে গিয়ে আগের স্কোয়াডের অনেকেই এবার নেই। তাঁদের শুভকামনা জানিয়ে প্রীতি আরও বলেছেন, ‘নিলামের আগে অনেক দ্বিধা তৈরি হয়। কিন্তু নিলামের টেবিলে গেলেই মনে হয়, ঠিক আছে। এখন আমাকে শান্ত থাকতে হবে। (গত মৌসুমের) কিছু খেলোয়াড়কে আমরা মিস করতে যাচ্ছি। তাদের জন্য আমার একটু খারাপ লাগছে। তবে সব মিলিয়ে আমি খুব খুশি। আমি দলের পুরোনো খেলোয়াড়দের মঙ্গল কামনা করছি। যারা নতুন এসেছে, তাদের জন্য শুভকামনা। এখন আমি একটি দুর্দান্ত মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করছি।’
২০০৮ সালে আইপিএলের পথচলা শুরু। তখন থেকেই টুর্নামেন্টে খেলে যাচ্ছে প্রীতির পাঞ্জাব কিংস। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাঁর। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আগের ১৭ মৌসুমের মধ্যে ১৫টিতেই প্লে-অফ পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ ১০ আসরে একবারও লিগ পর্বের বাধা টপকাতে পারেনি।
তবে শিরোপা জয়ের আশায় পাঞ্জাব এবার আটঘাট বেঁধে নেমেছে। শুধু দল ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রেই নয়, কোচিং স্টাফেও বদল এনেছে পাঞ্জাব। ট্রেভর বেলিসকে সরিয়ে কিংবদন্তি রিকি পন্টিংকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পন্টিংয়ের কোচিংয়ে ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, ২০২০ সালে রানার্সআপ হয় দিল্লি ক্যাপিটালস। পন্টিংয়ের কোচিংয়ে প্রীতির পাঞ্জাব এবার অধরা শিরোপা জিততে পারবে কি না, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৬ মাস।
২০২৫ সালে আইপিএলের ১৮তম আসর শুরু হবে ১৪ মার্চ, ফাইনাল ২৫ মে।