আইনশৃঙ্খলাসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দলটি মনে করছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠীর বিক্ষোভে দেশে একধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ঘটনায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের হাত রয়েছে; কিন্তু সরকার সামাল দিতে পারছে না।
গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সেখানে রাজধানীতে অটোরিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, ছাত্র সংঘর্ষ, প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ঘিরে কর্মসূচি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকেরা আলোচনা করেন। তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা পরিকল্পিতভাবে কিছু ঘটনা ঘটাচ্ছে। সরকার তাদের সামাল দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চললে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের নমনীয় মনোভাব নৈরাজ্যকারীদের উৎসাহী করেছে বলেও মনে করছেন নেতারা। চক্রান্ত ও সহিংস অবস্থার শঙ্কা থাকার পরেও সরকার পরিস্থিতি শক্তভাবে সামলাতে পারেনি। এতে জনমনে উৎকণ্ঠা তৈরি হচ্ছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল; কিন্তু সরকার সেগুলো খুব একটা আমলে নেয়নি। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পতিত আওয়ামী লীগে সরকারের ‘দোসরদের’ রেখে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন। বিষয়টি নিয়ে বারবার সতর্ক করার পরও সরকার তা আমলে নিচ্ছে না।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে বিতর্ক
স্থায়ী কমিটির সভায় থাকা একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে বিএনপির লিখিত সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা নিয়ে সভায় তিন নেতার মধ্যে বিতর্ক হয়। শেষে কয়েকটি বিষয় সংশোধন করে সংবিধানের সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে নিজেদের লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছি বিএনপি। দলটি সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃজনসহ ৬২টি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে।
সভা সম্পর্কে ওই সূত্র জানায়, আলোচনার শুরুতে সংবিধানের সংস্কারের প্রস্তাবগুলো সভায় উত্থাপন করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। এ সময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খান প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন। কিন্তু সালাহ উদ্দিন আহমদ এতে রাজি না হওয়ায় এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। খন্দকার মোশাররফ ও নজরুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, তাহলে সভায় এটি উত্থাপনের প্রয়োজন ছিল কি না।
এই সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। তাঁর উপস্থিতিতেই তিন নেতার বিতর্ক হয়। পরে আলোচনার পর কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী এনে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। তবে এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সভায় ওই তিনজন ছাড়াও জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও হাফিজ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।