শুধু ছাত্রসমাজের আন্দোলনে কিংবা কয়েক দিনের আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ‘দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর মানুষ অত্যাচার সহ্য করে দেশ একটি বারুদের বাক্সে পরিণত হয়েছিল। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন সেই বারুদকে জ্বালিয়ে দেয়।’
আজ সোমবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের আলীপুর মোড়ে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজাহিদুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। মুজাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, কোটাবিরোধী না হলে অন্য ইস্যুতে আন্দোলনেও এটা (সরকার পতন) সম্ভব হতো। কেননা, দেশের কুলি, মজুর, শ্রমিক এ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় বুক বেঁধে বসেছিল। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তাই দেশের মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি ঘটেছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, কৃষি ফসলের লাভজনক দাম, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা, গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, অবিলম্বে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে সিপিবি।
সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যে রক্তের মাধ্যমে এ বিজয় পেয়েছি, তা হারিয়ে যেতে দেব না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার এ মাটিতে আর আসতে পারবে না। এর মানে এই নয় যে নতুন করে ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে না। এ জন্য এমন এক ব্যবস্থা আমাদের করে যেতে হবে, যাতে নতুন করে এ দেশে ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয়।’
ইউনূস সরকারের সব ইতিবাচক কাজে সমর্থন দেবে সিপিবি মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এ সরকার বিপ্লবী সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন সৃষ্টি করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়াই হবে এ সরকারের প্রথম কাজ। তিনি বলেন, ‘হাসিনা বলেছিল “চিরদিন দরকার, শেখ হাসিনার সরকার”। এখন তো দেখি আপনারা বলা শুরু করতে চাচ্ছেন “চিরদিন দরকার সংস্কারপন্থী সরকার।”’
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁরা ’৭২–এর সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান করতে চান, তাঁদের মধ্যে দুরভিসন্ধি আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাঁরা ধ্বংস করে দিতে চান।’ তিনি বলেন, সংবিধান এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে জনগণ ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পারবেন আবার জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করলে তাঁকে টেনে নামাতে পারবেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবির জেলা সভাপতি আজাদ আবুল কালাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রুহুল আমীন ও সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়।