বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আপাতত বিরতি। আগামী মার্চের আগে মাঠে নামতে হবে না দলগুলোকে। এর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে ১৮ ম্যাচের ১২টিই খেলে ফেলেছে দলগুলো। যেখানে শীর্ষ স্থানে আছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ নিশ্চিত বললেই চলে।
অন্য দিকে একের পর এক ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্স দেখানো ব্রাজিল আছে ৫ নম্বরে। পরিবর্তিত নিয়মের কারণে ব্রাজিলকে আপাতত বড় বিপদ চোখ রাঙাচ্ছে না। তবে এই দুর্দশা দ্রুত দূর করতে না পারলে বড় ধরনের বিপদে পড়তে হবে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
আর্জেন্টিনা
প্রথম স্থান, ২৫ পয়েন্ট, গোল ব্যবধান +১৪
আর্জেন্টিনার সোনালি সময় কি তবে শেষ হতে চলল? এখনই এই প্রশ্ন শুনে আর্জেন্টিনা ভক্তরা তেড়ে আসতে পারেন। কিন্তু দলটির শেষ ৫ ম্যাচের পারফরম্যান্স কি তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছে না? এর মধ্যে অবশ্য বলিভিয়ার বিপক্ষে ৬-০ গোলের বড় জয় আছে। কিন্তু সেই জয় কোনোভাবেই আড়াল করতে পারছে না দুই হার ও এক ড্রকে। এমনকি সর্বশেষ পেরুর বিপক্ষেও আর্জেন্টিনা জিতেছে কোনোরকমে ১-০ গোলে। আর্জেন্টিনার সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া হলেও সেটা অবশ্য দলটির বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করার পথে সামান্য বাধাও তৈরি করতে পারবে কি না সন্দেহ।
বিশ্বকাপের পরিবর্তিত কাঠামো অনুযায়ী দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পাবে ৬টি দেশ। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে সরাসরি টিকিট পেতে পয়েন্ট তালিকার ছয়ে থাকলেই চলবে। এমনকি ৭ নম্বর দলেরও সুযোগ আছে প্লে অফ খেলে জায়গা করে নেওয়ার। এমন পরিস্থিতিতে ২৫ পয়েন্ট বিশ্বকাপ খেলার জন্য বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জন্য যথেষ্টই হওয়ার কথা। ফলে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে আপাতত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হলেও চলবে।
তবে আর্জেন্টিনার জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হতে পারে খেলার ধরন। লিওনেল মেসির ছন্দ নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়শই চোটে পড়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। পাশাপাশি টানা সাফল্যের ক্লান্তিও যেন ভর করেছে দলটির ওপর। আর্জেন্টিনার শীর্ষ ক্রীড়া লেখক পাবলো ভারস্কি প্যারাগুয়ের বিপক্ষে মেসিদের ২-১ গোলে হারের পর শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু— আমরা যে দলকে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা হিসেবে জেনেছি, সেটা হয়তো শেষ হতে চলল।’ এখন মেসি-স্কালোনি জুটি নতুন কোনো জাদুতে এসব শঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারেন কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষা।
উরুগুয়ে
দ্বিতীয় স্থান, ২০ পয়েন্ট, গোল ব্যবধান +৮
মার্সেলো বিয়েলসার হাত ধরে লম্বা সময় পর ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছিল উরুগুয়ে। সে লক্ষ্যে শুরুটাও দারুণভাবে করেছিল তারা। কাছাকাছি সময়ে হারিয়ে দিয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলকেই। কিন্তু উরুগুয়ের সে স্বপ্ন বড় ধাক্কা খায় কোচ বিয়েলসার সঙ্গে লুইস সুয়ারেজ-ফেদে ভালভের্দেদের বিরোধের খবর সামনে আসার পর। এই বিরোধের প্রভাব যে উরুগুয়ের পারফরম্যান্সে পড়েছে তা একরকম স্পষ্ট।
কোপা আমেরিকার পর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৬ ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র ১ ম্যাচ। এ ছাড়া চারটি ড্রয়ের বিপরীতে আছে ১টি হারও। বাজে পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা বদলাতে না পারলে পরের ধাপগুলোতে দ্বিতীয় স্থান থেকে ছিটকে যেতে পারে দলটি। বর্তমানে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে উরুগুয়ের ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়া। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে আছে ব্রাজিল। তাই বিয়েলসাকে দ্রুতই নতুন করে দলকে জয়ে ফেরাতে হবে। নয়তো সামনে বিপদে পড়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ইকুয়েডর
তৃতীয় স্থান, ১৯ পয়েন্ট, গোল ব্যবধান +৭
এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইকুয়েডরকে দারুণ এক চমক বলা যায়। যদি তিন পয়েন্টের জরিমানা দিতে না হতো তবে তালিকার দুইয়ে থাকতে পারত তারা। এর মধ্যে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারানো ম্যাচটিতে দারুণ নৈপুণ্যও দেখিয়েছে তারা। তবে আলাদা এখানে বলতে হবে দলটির রক্ষণের কথা। বাছাই পর্বে ১২ ম্যাচে তারা মাত্র ৪টি গোল হজম করেছে। যা দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এই ছন্দ ধরে রাখলে সামনের দিনগুলোয় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের মতো দলগুলোর জন্য মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে ইকুয়েডর।
কলম্বিয়া
চতুর্থ স্থান, পয়েন্ট ১৯, গোল ব্যবধান +৫
কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হারার আগে নেস্তর লরেনৎসোর কলম্বিয়া টানা প্রায় দুই বছর অপরাজিত ছিল। ফাইনালে হারলেও ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় এক দল হিসেবেই দেখা হচ্ছিল কলম্বিয়াকে। কিন্তু সেই দলটিই কি না বাছাইপর্বে শেষ চার ম্যাচের ৩টিতে হেরেছে। ফলে সময়টা এখন লরেনৎসোর জন্য নতুন করে দলকে গুছিয়ে নেওয়ার। সে জন্য অবশ্য মার্চ পর্যন্ত সময়ও পাচ্ছেন তিনি। এখন দলকে ঠিকঠাক পথে ফেরাতে পারেন সেটাই দেখার অপেক্ষা।
ব্রাজিল
৫ম স্থান, পয়েন্ট ১৮, গোল ব্যবধান +৬
হুট করে কেউ দেখলে চোখের ভুল করতে পারে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে ব্রাজিলের অবস্থান এখন ৫ নম্বরে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম বাজে সময় পার করছে দলটি। বাছাই পর্বে ১২ ম্যাচের ৪টিতে হারের পাশাপাশি ড্র করেছে ৩ ম্যাচে। আর জয় ৫টিতে। আগের নিয়মে বাছাইপর্ব হলে ব্রাজিল এখন বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় থাকত। সেই শঙ্কা আপাতত না থাকলেও এই পারফরম্যান্স নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই।
শেষ পর্যন্ত এমন খেলে বিশ্বকাপে গেলেও, প্রাপ্তির খাতা শূন্যই থেকে যেতে পারে। এমন নয় যে ব্রাজিল শুধু ম্যাচই জিততে পারছে না, বরং তাদের সামগ্রিক পারফরম্যান্সই হতশ্রী রূপ নিয়েছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় নেই বললেই চলে। অ্যাটাকিং থার্ডেও নেই সেই চিরচেনা ব্রাজিলীয় দাপট। ফলে কোচ দরিভাল জুনিয়রের জন্য সামনের দিনগুলো অ্যাসিড টেস্টের মতো। মার্চের আগে দলকে নতুন করে উজ্জীবিত করতে না পারলে ব্রাজিলের ভবিষ্যতের পাশাপাশি দরিভালের চাকরিও সংকটে পড়তে পারে।
শীর্ষ ৫ দলের বাইরে পরের স্থানটি প্যারাগুয়ের। ১৭ পয়েন্ট নিয়ে ভালো অবস্থানে আছে তারাও। আর সপ্তম দল হিসেবে কপাল খুলতে পারে বলিভিয়ার। তবে পয়েন্ট তালিকায় আর ওপরে উঠতে না পারলে প্লে অফের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই বিশ্বকাপে যেতে হবে তাদের।