ব্যক্তির কিছু আয় আছে, যা করমুক্ত। এসব আয়ের বিপরীতে কর দিতে না হলেও আয়কর ফাইলে তা লিপিবদ্ধ করলে বৈধ উৎস হিসেবে সাদা টাকা তৈরি করবে। জেনে নেওয়া যাক সেসব আয় সম্পর্কে।
করদাতার করমুক্ত ও কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় থাকলে তা রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে—
(১) সরকারি পেনশন তহবিল থেকে করদাতার প্রাপ্য বা বকেয়া পেনশন;
(২) সরকারি আনুতোষিক তহবিল থেকে পাওয়া করদাতার অনধিক আড়াই কোটি টাকা আয়;
(৩) কোনো স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল, পেনশন তহবিল ও অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল থেকে সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা আয়;
(৪) সরকারি সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারী স্বেচ্ছায় অবসরের সময় এ উদ্দেশ্যে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
(৫) পেনশনারস সেভিংস সার্টিফিকেট থেকে সুদ হিসেবে পাওয়া অর্থ বা অর্থের সমষ্টি। তবে সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের শেষে ওই সার্টিফিকেটে বিনিয়োগ করা অর্থের পুঞ্জীভূত অর্জিত মূল্য অনধিক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত;
(৬) কোনো নিয়োগকারীর পক্ষ থেকে কোনো কর্মচারীর ব্যয় পুনর্ভরণের ক্ষেত্রে
(ক) ওই ব্যয় সম্পূর্ণভাবে ও আবশ্যকতা অনুসারে কর্মচারীর দায়িত্ব পালন বাবদ ব্যয় করা হয়;
(৭) কোনো অংশীদারি ফার্মের অংশীদার হিসেবে মূলধনি আয় বাবদ প্রাপ্ত আয়ের অংশ, যার ওপর ওই ফার্ম কর পরিশোধ করেছে;
(৮) হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে একজন করদাতা যে পরিমাণ অর্থ প্রাপ্ত হন, যার ওপর ওই পরিবার কর পরিশোধ করেছে;
(৯) বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তি করদাতার বিদেশে উপার্জিত আয়, যা তিনি প্রবাসী আয় হিসেবে বাংলাদেশে এনেছেন;
(১০) কোনো করদাতার ওয়েজ আর্নারস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড, ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, পাউন্ড স্টারলিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা পাউন্ড স্টারলিং প্রিমিয়াম বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়;
(১১) রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি—পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির আয়, যা পার্বত্য জেলায় পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত হয়েছে;
(১২) কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির কৃষি খাত থেকে অনধিক দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয়, যদি ওই ব্যক্তি—
(ক) পেশায় কৃষক হন;
(খ) সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের নিম্নবর্ণিত আয় ছাড়া অন্য কোনো আয় না থাকে, যথা—
(অ) জমি চাষাবাদ থেকে আয়;
(আ) সুদ বা মুনাফা বাবদ অনধিক ২০ হাজার টাকা আয়;
(১৩) সফটওয়্যার তৈরিসহ তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি খাতের ব্যবসায় আয়। খাতগুলো হলো এআই বেজড সলিউশন ডেভেলপমেন্ট; ব্লকচেইন বেজড সলিউশন ডেভেলপমেন্ট; রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং; সফটওয়্যার অ্যাজ আ সার্ভিস; সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস; ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস ও ডেটা সায়েন্স; মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস; সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন; সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস; ওয়েব লিস্টিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও সার্ভিস; আইটি সহায়তা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস; জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস; ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট; ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন; ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং; ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও ই-পাবলিকেশন; আইটি ফ্রিল্যান্সিং; কল সেন্টার সার্ভিস; ডকুমেন্টে কনভারশন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং।
তবে শর্ত থাকে যে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ওই ব্যবসায়ের সব আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগ শতভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
(১৪) ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আয়;
(১৫) যেকোনো পণ্য উৎপাদনে জড়িত ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প থেকে আয়, যার—
(ক) শিল্পটি নারীর মালিকানাধীন হলে বার্ষিক লেনদেন ৭০ লাখ টাকার কম;
(খ) অন্যান্য ক্ষেত্রে, বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার টাকা;
(১৬) শর্ত সাপেক্ষে, ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যক্তির জিরো কুপন বন্ড থেকে কোনো আয়; যেমন (ক) বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন নিয়ে কোনো ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করলে;
(খ) বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা জিরো কুপন বন্ড;
(১৭) ‘চাকরি থেকে আয়’ হিসেবে পরিগণিত আয়ের এক–তৃতীয়াংশ বা সাড়ে চার লাখ টাকার মধ্যে যেটা কম;
(১৮) কোনো ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সম্মানী বা ভাতা বাবদ সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
(১৯) সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত কোনো পদক/পুরস্কার;
(২০) কোনো বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা থেকে আয়;
(২১) আইসিবির ইউনিট ফান্ড থেকে অর্জিত আয়;
(২২) ৩০ জুন ২০৩০ তারিখের মধ্যে কোনো সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে অর্জিত আয় প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে আনা হলে।
করমুক্ত আয় করদাতার মোট আয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে না। এসব আয় রিটার্নে করমুক্ত আয়ের কলামে প্রদর্শন করতে হবে। তবে কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে এসব আয়ে কর অব্যাহতি সুবিধা পাওয়া যাবে না।
লেখক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, আয়কর আইনজীবী ও নির্বাহী পরিচালক, গোল্ডেন বাংলাদেশ