### ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে কিছু তথ্য
দেশের নারীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) এর সর্বশেষ গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর ১২,৭৬৪ জন নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করায় ৬,৮৪৪ জন মারা যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ধাপে ধরা পড়লে সঠিক ও পূর্ণ চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ ক্যান্সার রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে, সঠিক সময়ে ধরা পড়লেও কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে ক্যান্সার আবার ফিরে আসতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেন্ট’ বলা হয়।
### ক্যান্সার কেন ফিরে আসে?
সেরে ওঠার পরেও ক্যান্সার ফিরে আসার প্রধান কারণ হলো, দেহে ক্যান্সার কোষের উপস্থিতি। পেট সিটি স্ক্যান বা ম্যামোগ্রাফির মতো পরীক্ষাতেও এগুলো সহজে ধরা পড়ে না। সাধারণত প্রথমবার ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পর তিন-চার বছরের মধ্যেই আবার তা ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। কারও ক্ষেত্রে এই সময়রেখা ১০-১২ বছরও হতে পারে।
### ফিরে আসার লক্ষণ:
– হঠাৎ স্তনে ব্যথা অনুভব করা
– বুক, পিঠ, পাঁজরের হাড়ের ভিতরে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা
– স্তনের আকারে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা
– স্তনের মধ্যে কোনো ফোলা ভাব অনুভব করা
– শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা বুকে চাপ ধরে থাকা
– অতিরিক্ত ক্লান্তি, যা বিশ্রামের পরেও কাটে না
### প্রতিরোধ এবং সচেতনতা:
– নিয়মিত স্তন পরীক্ষা এবং চেক-আপ করা
– স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
– নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা
– মদ্যপান এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা
### চিকিৎসা পদ্ধতি:
1. **সার্জারি:** ক্যান্সারের অংশ অপসারণ করা হতে পারে।
2. **কেমোথেরাপি:** ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
3. **রেডিয়েশন থেরাপি:** রেডিয়েশন দ্বারা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
4. **হরমোন থেরাপি:** হরমোনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি রোধ করা হয়।
5. **টার্গেটেড থেরাপি:** ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট প্রোটিন লক্ষ্য করে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
### মানসিক সহায়তা:
ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঙ্গে মানসিকভাবে মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে। তাই মানসিক সহায়তা এবং কাউন্সেলিং সহায়ক হতে পারে। পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে তা নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই নিয়মিত পরীক্ষা ও সচেতনতা অপরিহার্য।
**অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, সিনিয়র কনসালটেন্ট, রেডিয়েশন অনকোলজি, আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, সেক্টর-১০, উত্তরা, ঢাকা**