বাংলাদেশ চেম্বারের সেমিনারে বক্তারা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকলে নিকট ভবিষ্যতে তা শিল্প খাতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দিন ধরে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ পাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খাতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কারখানা বন্ধও হয়ে গেছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকলে নিকট ভবিষ্যতে তা শিল্প খাতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন দেশের বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেশনিংয়ের মাধ্যমে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
‘শিল্প খাতে জ্বালানি–সংকট সমাধানের পথ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রধান অতিথি এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দীন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বড় দুটি সমস্যা আমরা দেখছি। একটা হচ্ছে প্রতিযোগিতার অভাব, আরেকটা হলো অপচয়। দুটি সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। সরকারি খাতের ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতার অনেক অভাব রয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমরা এখন যেখানে যেটা পারছি, উন্মুক্ত (প্রতিযোগিতামূলক) করে দিচ্ছি। আপনারা (ব্যবসায়ীরা) বিশেষ করে জ্বালানি খাতে এ সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেন।’
অপর উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দীন জানান, ‘জ্বালানি খাতে বর্তমানে যে দুর্বলতা রয়েছে, তা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পনা (ডিজাইন) করে করা হয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বাস্তবতাকে অস্বীকার করার প্রবণতা নেই। সুতরাং আমরা বিদ্যমান সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের দিকেও যেতে পারব বলে আশা করছি।’ এ জন্য ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা চান তিনি।
ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ হচ্ছে শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। এগুলো ঠিক না হলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে না। মূল্যস্ফীতিও কমবে না।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আমাকে গ্যাস দেন, আমি আপনাকে বৈদেশিক মুদ্রা দেব। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে চীন থেকে অনেক বিনিয়োগ স্থানান্তর হবে। কিন্তু জ্বালানি–সংকট থাকলে এসব বিনিয়োগ ধরা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে না।’
এফবিসিসিআইয়ের আরেক সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে দুর্নীতির বড় জায়গা ছিল জ্বালানি খাত। স্বচ্ছতা না থাকায় এ খাতে অনেক অলিগার্ক তৈরি হয়েছে। আর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
‘চুরি বন্ধ করতে হবে’
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং চামড়া পণ্য ও জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দিনে পাঁচ-সাতবার করে গ্যাসের সরবরাহ চলে যাচ্ছে। এতে পণ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস না থাকার অন্যতম কারণ সিস্টেম লস। সিস্টেম লসের নামে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ গ্যাস চুরি হয়। এটি বন্ধ করতে হবে। যারা এত বছর ধরে চুরি করেছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ইজাজ, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মো. শামসুজ্জামান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।