দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২৩:২২

‘বড় ভাই’দের ছাড়াই প্রথম ‘পরীক্ষা’য় মিরাজ

অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টে আজ মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ–বাংলাদেশ

টেস্ট ক্রিকেট যে আসলে একটি পরীক্ষা, এটি বহু কারণে বহুবারই লেখা হয়েছে। ভবিষ্যতেও নিশ্চয়ই হবে। পাঁচ দিন মাঠে থাকার পরীক্ষা তো বটেই, আরও কত রকম পরীক্ষার সামনে যে পড়তে হয় টেস্ট ম্যাচের পরতে পরতে! সেই টেস্ট ক্রিকেট এবার বাংলাদেশের সামনে আরও একটি পরীক্ষা নিয়ে হাজির। পরীক্ষার ‘কেন্দ্র’ পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগা আর জ্যামাইকায়।

প্রথম পরীক্ষাটি বাংলাদেশ সময় আজ রাত আটটায় শুরু হবে অ্যান্টিগায়। এখানেই সিরিজের প্রথম টেস্ট। যে সিরিজ শুরুর আগেই একটা জায়গায় আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম কোনো টেস্ট সিরিজে দেশের ক্রিকেটে ‘পঞ্চপাণ্ডব’খ্যাত মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের কেউই নেই। মাঝে ২০২২ ও ২০২৪ সালে এই পাঁচজনকে ছাড়া বাংলাদেশ দুটি টেস্ট খেললেও পাঁচজনের কারও স্কোয়াডেই না থাকা এই প্রথম।

চোটে পড়ে মাশরাফির টেস্ট অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেরই প্রথম টেস্টে, যেটিতে প্রথমবার বাংলাদেশ একসঙ্গে টেস্ট দলে পেয়েছিল ‘পঞ্চপাণ্ডব’কে। এরপর মাশরাফি আর টেস্টে ফেরেননি। মাহমুদউল্লাহ, সাকিবও টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অনানুষ্ঠানিক ‘অবসরে’ আছেন আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু টি–টোয়েন্টিকে বিদায় বলা তামিমও।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেললে খেলতে পারতেন শুধু মুশফিক। আঙুলের চোট তাঁকেও ছিটকে ফেলেছে। চোটের কারণে নেই–এর তালিকায় আছেন নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেনও। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেবেন সহ–অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

মিরাজ চাইলে এটিকে আলাদা একটি পরীক্ষা হিসেবেও নিতে পারেন। টেস্টে অ্যান্টিগাতেই প্রথম অধিনায়কত্ব করবেন, যাতে থাকবেন না ‘বড় ভাই’দের কেউ; প্রয়োজনে মাঠে যাঁদের পরামর্শ নিতে পারতেন। সবচেয়ে বড় কথা, টেস্ট সিরিজটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে। শুধু মিরাজ কেন, ‘পঞ্চপাণ্ডব’ প্রতিনিধিরাও যখন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা পরীক্ষার আগুনে ফেলেছে সবাইকেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে ১০ টেস্ট খেলে ৭টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। বাকি তিন টেস্টের দুটিতে জিতেছে বটে, তবে তা যত না বাংলাদেশের কৃতিত্বকে তুলে ধরে, তার চেয়ে বেশি মনে করিয়ে দেয় একটা বিশেষ সময়কে।

২০০৯ সালের ওই সিরিজে বাংলাদেশের কাছে ঘরের মাঠে ধবলধোলাই হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ পূর্ণ শক্তির তো নয়ই, ক্রিকেটারদের ‘গৃহযুদ্ধে’র কারণে ছিল ভাঙাচোরা এক দল। ওই সিরিজের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে বাংলাদেশ ছয়টি টেস্ট খেলে সব কটিতেই হেরেছে। আজ থেকে শুরু দুই টেস্টের আরেকটি সিরিজের আগে ওই ছয় হারের ব্যবধানগুলো স্মৃতিতে ভাসালে বাংলাদেশ দলের কাছে প্রত্যাশার সীমাটা ঠিক করতে সুবিধা হবে। যা যথাক্রমে ১০ উইকেট, ২৯৬ রান, ইনিংস ও ২১৯ রান, ১৬৬ রান, ৭ উইকেট ও ১০ উইকেট।

অবশ্য এ–ও ঠিক যে কোনো খেলাই শুধু ইতিহাস মাথায় রেখে খেললে হয় না। ‘বর্তমান’ সব সময়ই যেকোনো খেলার উভয় প্রতিপক্ষকে নতুন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। নতুন অভিজ্ঞতা অতীতের সঙ্গে সব সময় মিলে না–ও যেতে পারে, ইতিহাস সব সময় ফিরে না–ও আসতে পারে। অ্যান্টিগা টেস্ট দিয়ে শুরু এবারের সিরিজে মিরাজের বাংলাদেশ সেভাবে ভাবলেই ভালো। পেছনে যা–ই থাকুক, আজ থেকে শুরু করে আগামীটা হোক অন্য রকম।

সমস্যা হলো, এই সিরিজ নিয়ে ঠিক একইভাবে ভাবছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের টেস্ট কোচ আন্দ্রে কুলিও। পেছনে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ হারের ক্ষত, সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো কিছু করার তাড়না। তার আগে মাঝের বাংলাদেশ সিরিজটি থেকে তাঁরা সঞ্জীবনী নিতে চাইবেন, এটাই তো স্বাভাবিক।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এক ভিডিও বার্তায় পরশু কুলি বলেছেন সেটাই, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পাকিস্তানে যাওয়ার আগে ঘরের মাঠে আমাদের জয় পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

অ্যান্টিগা ও জ্যামাইকার টেস্ট দুটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হলেও বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো দলেরই ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা নেই। ৯ দলের মধ্যে আটে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়ে। এই সিরিজ তাই একদিক দিয়ে ৯ দলের মধ্যে নবম না হওয়ার লড়াইও।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ