মেগা নিলাম কী
আইপিএলে প্রতিবছরই খেলোয়াড় বিক্রির জন্য নিলাম হয়। তবে সব নিলাম মেগা নিলাম নয়। মেগা নিলাম সাধারণত তিন বছর পর পর হয়। যে বছর মেগা নিলাম হয়, সে বছর দলগুলো আগের মৌসুম থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন খেলোয়াড় ধরে রাখতে পারে। দল সাজানোর জন্য বাকি সব খেলোয়াড়ই কিনতে হয় নিলাম থেকে।
আর মেগা নিলামের পরের দুই বছরে যে নিলামগুলো হয়, তাতে খেলোয়াড় বিক্রির পরিমাণ থাকে কম। কারণ, জায়গাই তখন কম খালি থাকে। মেগা নিলামে বেশি খেলোয়াড় বিক্রি হয় বলে এটি দুই দিনব্যাপী হয়।
এবার মেগা নিলামে উঠছেন কতজন খেলোয়াড়
আইপিএল ২০২৫-এর মেগা নিলামের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন মোট ১৫৭৪ জন খেলোয়াড়। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আগ্রহের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত নিলামে জায়গা পেয়েছেন ৫৭৫ জন খেলোয়াড়। এর মধ্যে ৩৬৬ জন ভারতীয়, ২০৯ জন বিদেশি (অ-ভারতীয়)। ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে ৪৮ জনের এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আছে (ক্যাপড), ৩১৮ জন এখনো অভিষেকের অপেক্ষায় (আনক্যাপড)।
বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইংল্যান্ডের ৩৮ জন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ৩৭ জন। দক্ষিণ আফ্রিকার আছেন ৩১ জন, নিউজিল্যান্ডের ২৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২২, শ্রীলঙ্কার ১৯, আফগানিস্তানের ১৮, বাংলাদেশের ১২, জিম্বাবুয়ের ৩, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ২ জন করে, স্কটল্যান্ডের ১ জন।
নিলামে কয়টি দল অংশ নিচ্ছে
এবারের নিলামে অংশ নেবে ২০২৫ আইপিএলের ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি।
কতজন খেলোয়াড় নিলামে বিক্রি হবেন
একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি সর্বোচ্চ ২৫ ও সর্বনিম্ন ১৮ জনের স্কোয়াড তৈরি করতে পারবে। সুতরাং ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলে সর্বোচ্চ ২৫০ জন খেলোয়াড় নিতে পারবে। এর মধ্যে ১০টি দল মিলে আগেই তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৪৬ জন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে। তার মানে সর্বোচ্চ ২০৪ জন খেলোয়াড় বিক্রি হবেন এবারের নিলামে। কোনো দল যদি ২৫ জনের স্কোয়াড না করে আরও ছোট স্কোয়াড করে, তাহলে সংখ্যাটা আরও কমে আসবে।
কত টাকা খরচ করতে পারবে প্রতিটি দল
একটা দল সর্বোচ্চ ১২০ কোটি ভারতীয় রুপি খরচ করতে পারবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস আগেই চুক্তিবদ্ধ ৫ জন খেলোয়াড়কে ধরে রেখেছে, যাঁদের পেছনে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির এরই মধ্যে ৭৫ কোটি রুপি খরচ হয়ে গেছে। সুতরাং অন্তত ১৮ জনের স্কোয়াড গঠন করতে হলে মুম্বাইকে বাকি ৪৫ কোটি রুপি দিয়ে আরও ১৩ জন খেলোয়াড় কিনতে হবে।
কোন দল কাদের ধরে রেখেছে
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস: জসপ্রীত বুমরা (১৮ কোটি), সূর্যকুমার যাদব (১৬.৩৫), হার্দিক পান্ডিয়া (১৬.৩৫), রোহিত শর্মা (১৬.৩০), তিলক বর্মা (৮ কোটি)।
চেন্নাই সুপার কিংস: রুতুরাজ গায়কোয়াড় (১৮ কোটি), মাতিশা পাতিরানা (১৩ কোটি), শিবম দুবে (১২ কোটি), রবীন্দ্র জাদেজা (১৮ কোটি), মহেন্দ্র সিং ধোনি (৪ কোটি)।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: বিরাট কোহলি (২১ কোটি), রজত পাতিদার (১১ কোটি), যশ দয়াল (৫ কোটি)।
দিল্লি ক্যাপিটালস: অক্ষর প্যাটেল (১৬.৫ কোটি), কুলদীপ যাদব (১৩.২৫ কোটি), ট্রিস্টান স্টাবস (১০ কোটি), অভিষেক পোরেল (৪ কোটি)।
কলকাতা নাইট রাইডার্স: রিংকু সিং (১৩ কোটি), বরুণ চক্রবর্তী (১২ কোটি), সুনীল নারাইন (১২ কোটি), আন্দ্রে রাসেল (১২ কোটি), হর্ষিত রানা (৪ কোটি), রমনদীপ সিং (৪ কোটি)।
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস: নিকোলাস পুরান (২১ কোটি), রবি বিষ্ণয় (১১ কোটি), মায়াঙ্ক যাদব (১১ কোটি), মহসিন খান (৪ কোটি), আয়ুশ বাদোনি (৪ কোটি)।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: প্যাট কামিন্স (১৮ কোটি), অভিষেক শর্মা (১৪ কোটি), নীতিশ রেড্ডি (৬ কোটি), হাইনরিখ ক্লাসেন (২৩ কোটি), ট্রাভিস হেড (১৪ কোটি)।
গুজরাট টাইটানস: রশিদ খান (১৮ কোটি), শুবমান গিল (১৬.৫ কোটি), সাই সুদর্শন (৮.৫ কোটি), রাহুল তেওয়াতিয়া (৪ কোটি), শাহরুখ খান (৪ কোটি)।
পাঞ্জাব কিংস: শশাঙ্ক সিং (৫.৫ কোটি), প্রভসিমরন সিং (৪ কোটি)।
রাজস্থান রয়্যালস: সঞ্জু স্যামসন (১৮ কোটি), যশস্বী জয়সোয়াল (১৮ কোটি), রিয়ান পরাগ (১৪ কোটি), ধ্রুব জুরেল (১৪ কোটি), শিমরন হেটমায়ার (১১ কোটি), সন্দীপ শর্মা (৪ কোটি)।
মার্কি খেলোয়াড় কী
দলগুলোর আগ্রহের ভিত্তিতে নিলামে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত খেলোয়াড়দের একটা তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের বলা হচ্ছে মার্কি খেলোয়াড়। এবার নিলামে মার্কি খেলোয়াড়দের দুটি সেট করা হয়েছে। প্রতি সেটে থাকছেন ৬ জন খেলোয়াড়।
কীভাবে হবে নিলাম
সবার আগে নিলামে উঠবেন মার্কি খেলোয়াড়েরা। তারপর এরই মধ্যে যাঁদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে, তাঁদের নিজ নিজ বিশেষত্ব অনুযায়ী ভাগ করে নিলামে তোলা হবে, যেমন ব্যাটসম্যান, অলরাউন্ডার, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, ফাস্ট বোলার, স্পিনার। এরপর একইভাবে এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা খেলোয়াড়দের তোলা হবে নিলামে। ৫৭৪ জনের নিলাম শেষ হলে দলগুলো অবিক্রীত খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে কাঙ্ক্ষিত খেলোয়াড়দের একটা তালিকা দেবে। সেই তালিকায় থাকা খেলোয়াড়দের আবার নিলামে তোলা হবে।
রাইট টু ম্যাচ কার্ড কী? কীভাবে ব্যবহার করা যাবে
সর্বশেষ আসরে একই দলে ছিলেন, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ জনকে রাখতে পেরেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এই ৬ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ জন এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা (ক্যাপড), সর্বোচ্চ ২ জন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা (আনক্যাপড) খেলোয়াড়।
এই ছয়জন খেলোয়াড়কে ধরে রাখার পদ্ধতি দুটি। একটি হচ্ছে নিলামের আগে সরাসরি চুক্তি করা। আরেকটি রাইট টু ম্যাচ (আরটিএম) কার্ড ব্যবহার করা। প্রশ্ন হচ্ছে, আরটিএম কার্ড কীভাবে ব্যবহার করতে হবে?
পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ছেড়ে দেওয়ার পর কোনো খেলোয়াড় নিলামে গেলে তাঁকে বিভিন্ন দল বিড করে। বিডিং শেষ হওয়ার পর পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে তারা এই খেলোয়াড়ের জন্য আরটিএম কার্ড ব্যবহার করতে চায় কি না। সেই দল চাইলে তখন নিলামে যত সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল, একই দামে ওই খেলোয়াড়কে কিনে নিতে পারবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৫ আইপিএলের জন্য বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমানকে ছেড়ে দিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। এখন ধরা যাক, মোস্তাফিজ নিলামে ওঠার পর তাঁর জন্য মুম্বাই সর্বোচ্চ ২ কোটি দাম বলল। এখন চেন্নাই চাইলে আরটিএম কার্ড ব্যবহার করে সেই ২ কোটি দামে আবার মোস্তাফিজকে কিনে নিতে পারবে।
এ ক্ষেত্রে পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি কোনো খেলোয়াড়ের জন্য আরটিএম কার্ড ব্যবহার করতে চায়, তখন সর্বোচ্চ বিড করা ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে তাদের বিড বাড়ানোর জন্য আরেকটা সুযোগ দেওয়া হবে। পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি তারপরও খেলোয়াড়কে কিনতে চায়, তাহলে সেই বাড়তি বিডের দামেই কিনতে হবে।
এর বাইরে পুরোনো কোনো খেলোয়াড়কে নিয়মিত বিডিং প্রক্রিয়ায় অন্য দলগুলোর সঙ্গে অংশ নিয়েও কেনা যাবে। তখন তারা ধরে রাখা খেলোয়াড়ের কোটায় পড়বেন না।