**শ্বাসকষ্ট: ফুসফুসের নাকি হার্টের সমস্যা?**
শ্বাসকষ্টের রোগীরা প্রায়ই দ্বিধায় থাকেন, কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন—বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ নাকি হার্ট বিশেষজ্ঞ। সাধারণভাবে মনে হতে পারে যে, শ্বাসকষ্ট যেহেতু ফুসফুসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই সঠিক। কিন্তু বাস্তবে, বেশিরভাগ শ্বাসকষ্টের মূল কারণ হার্টের অসুস্থতা। শিশু এবং প্রবীণদের ক্ষেত্রে ফুসফুসজনিত সমস্যা বেশি দেখা যায়।
### **ফুসফুসের কার্যক্রম ও শ্বাসকষ্টের কারণ**
ফুসফুস দেখতে স্পঞ্জের মতো, যার ভেতরে অসংখ্য বায়ুভর্তি ক্ষুদ্র বেলুনের মতো জায়গা থাকে, যাদের *এলভিওলি* বলা হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় এলভিওলি স্ফীত হয় এবং নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় ছোট হয়ে যায়। এলভিওলির দেয়ালে থাকা রক্তনালির মাধ্যমে শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয়ে যায় এবং অক্সিজেন রক্তে মিশে শরীরের কোষে পৌঁছায়।
এলভিওলির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। যেমন, ফুসফুসের বায়ুনালি চেপে যাওয়া (অ্যাজমা) বা প্রদাহ (ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও সিওপিডি)। এ ধরনের সমস্যা বংশগত বা জীবাণু সংক্রমণের কারণে হতে পারে। অ্যাজমায় শ্বাসনালি সংকুচিত হলে ইনহেলারের মাধ্যমে বায়ুনালি প্রসারিত করে শ্বাসকষ্ট কমানো যায়।
নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে এলভিওলিতে পুঁজ জমা হয়, বাতাস চলাচল ব্যাহত হয় এবং গ্যাস অদলবদল বন্ধ হয়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সাধারণত শিশু এবং বয়স্করা নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়।
### **হার্টের কার্যক্রম ও শ্বাসকষ্টের কারণ**
হার্টের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে শরীরের প্রতিটি কোণে পৌঁছানো হয়। তবে হার্টে ভাল্বের সমস্যা বা পাম্পিং কার্যকারিতা কমে গেলে ফুসফুসে রক্ত প্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
হার্ট দুর্বল হয়ে পড়লে বা *ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের* ক্ষেত্রে (যখন রক্তনালিতে ব্লক হয়), ফুসফুসে জমে থাকা রক্ত বাতাস প্রবাহ ব্যাহত করে। ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা বিশেষত পরিশ্রম বা শারীরিক কার্যকলাপের সময় তীব্র হয় এবং বিশ্রাম নিলে উপশম হয়।
### **ফুসফুস বনাম হার্টজনিত শ্বাসকষ্টের পার্থক্য**
– **ফুসফুসজনিত শ্বাসকষ্ট:**
– সাধারণত শিশু ও প্রবীণদের বেশি দেখা যায়।
– প্রায়ই জ্বর, কাশি, বা সংক্রমণের সঙ্গে থাকে।
– বায়ুনালি সংকোচন বা প্রদাহ এ সমস্যার মূল কারণ।
– **হার্টজনিত শ্বাসকষ্ট:**
– সাধারণত মধ্যবয়সী ও বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
– পরিশ্রম বা শারীরিক কাজের সময় তীব্র হয় এবং বিশ্রামে কমে।
– কাশি বা জ্বর সাধারণত থাকে না।
### **উপসংহার**
ফুসফুসজনিত সমস্যা যেমন অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, বা সিওপিডিতে কাশি ও জ্বর দেখা যায়। অন্যদিকে, হার্টজনিত শ্বাসকষ্টে জ্বর থাকে না, তবে পরিশ্রমকালীন উপসর্গ তীব্র হয়। উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সঠিক কারণ চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
**লেখক:**
চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা