শীতকালীন সময়ে পা ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় এটি নানা ধরনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত শীতের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ত্বককে দ্রুত আর্দ্রতা হারাতে বাধ্য করে, যার ফলে পা ফাটা, ফ্রস্ট বাইট, নখ ওঠা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির (এএডি) একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শীতকালে পায়ের সুরক্ষায় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।ঠাণ্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া, খালি পায়ে হাঁটা, কিংবা দীর্ঘ সময় গরম পানিতে গোসলের ফলে পা ফাটা এবং গোড়ালি ও নখের সমস্যা বাড়ে। এই ধরনের প্রদাহ পায়ের গোড়ালির ত্বককে ফাটিয়ে, চুলকানি এবং ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। অবহেলা করলে এসব সমস্যা গুরুতর ইনফেকশনে পরিণত হতে পারে। শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় পায়ের গোড়ালির ত্বক অনেক বেশি শক্ত, এবং শীতের শুষ্কতা ও ধুলাবালির কারণে গোড়ালি আরও শক্ত হয়ে যায়, যার ফলে পা ফাটার সমস্যা শুরু হয়।
থাইরয়েডের সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন, ভিটামিনের অভাব, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণে পায়ের গোড়ালি ফাটতে পারে, এবং কখনো কখনো তা গভীর ক্ষত (গ্যাংগ্রিন) সৃষ্টি করতে পারে। সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা বা অন্যান্য চর্মরোগের আক্রান্ত ব্যক্তিদের পায়ের সমস্যা বেশি হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে পা ফাটার সমস্যা বেশি দেখা যায়।
### পায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কীভাবে যত্ন নিতে হবে:
1. **গোসলের সময় সীমিত রাখুন**: শীতকালে ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি গোসল করবেন না। বেশি সময় গোসল করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পা ফাটার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
2. **পা ধোয়ার পর**: বাইরে থেকে ফিরে পা ধুয়ে ফেলুন এবং সুগন্ধমুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন, যা পায়ের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখবে।
3. **মরা কোষ সরানো**: গোসলের সময় পায়ের মরা কোষ নরম হয়ে যায়, তখন পিউমিস স্টোন বা ফুট স্ক্র্যাবারের সাহায্যে মরা কোষ তুলে ফেলুন।
4. **ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার**: গোসলের পর ৫ মিনিটের মধ্যে পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যাতে ১০% থেকে ২৫% ইউরিয়া, আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বা স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে।
5. **রাতে ময়েশ্চারাইজার লাগানো**: ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। রাতে মোজা পরতে ভুলবেন না, যাতে বিছানায় ময়েশ্চারাইজার না লাগে।
6. **আদর্শ মোজা নির্বাচন**: বাতাস চলাচল করতে সক্ষম এমন কাপড় বা উলের মোজা পরুন। এমন মোজা বেছে নিন যা পা উষ্ণ এবং শুষ্ক রাখবে। মোজার পাশাপাশি আরামদায়ক জুতা পরা উচিত।
7. **পানি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ**: শীতকালে প্রচুর পানি পান করুন এবং ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৩ সমৃদ্ধ খাবার খান। শীতকালীন ফল, শাক-সবজি, বাদাম, স্নেহজাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।
এছাড়া, পা ফাটার সমস্যা গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লিখেছেন: সাদিয়া সারা