শীতকালে হাঁপানি রোগীদের জন্য ঠান্ডা আবহাওয়া, সর্দি, কাশি, ফ্লু বা ঠান্ডাজ্বর অত্যন্ত কষ্টকর এবং বিপদজনক হতে পারে। প্রতি বছর শীতে শিশুদের মধ্যে প্রায় ৮৫% এবং বড়দের ৩৫% হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায়।
প্রধান কারণগুলো হলো:
– শীতে ঠান্ডা, জ্বর, শুষ্ক ঠান্ডা বাতাস, যা শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত করে,
– শীতে ধুলাবালি এবং ধোঁয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি,
– কুয়াশা ও বদ্ধ গুমোট পরিবেশ ইত্যাদি।
হাঁপানি থেকে রক্ষা পেতে যা করণীয়:
– শয়নকক্ষে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালামাল রাখবেন না। ঘরের সবকিছু ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালি কম উড়ে।
– টিভি, মশারি স্ট্যান্ড, সিলিং, পাখার ওপর জমে থাকা ধুলো প্রতি সপ্তাহে অন্য কাউকে দিয়ে পরিষ্কার করান।
– শোকেস বা বুক সেলফে রাখা পুরনো খাতা, ফাইল, বই ঝেড়ে ফেলুন।
– বাস, মোটরগাড়ি বা যানবাহনের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন এবং উগ্র সুগন্ধি এড়িয়ে চলুন।
– তীব্র দুর্গন্ধ বা ঝাঁজালো গন্ধ থেকে দূরে থাকুন।
– বাড়িতে হাঁস-মুরগি, বিড়াল বা পোষাপ্রাণী থাকলে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করবেন না।
– অ্যালার্জি থাকলে বাড়িতে ফুলের গাছ লাগাবেন না।
– ঘাসের ওপর বসা বা ঘাস কাটার কাজ থেকে বিরত থাকুন। শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল করুন এবং মাপলার ব্যবহার করুন।
– শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন—জোরে শ্বাস টানুন, ১৫ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দিন।
– প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ১০ মিনিট মুক্ত পরিবেশে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
– সর্বদা চিন্তা মুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন এবং হতাশাগ্রস্ত না হওয়ার চেষ্টা করুন।
– ছোট বাচ্চারা লোমশ পুতুল নিয়ে খেলা করবে না।
– ঘর নিজে ঝাড়ু দেবেন না; ঝাড়ু দিতে হলে মাস্ক, তোয়ালে বা গামছা দিয়ে নাক বেঁধে নিন।
– কাশি বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন।
– ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বা পানীয় কম খাবেন, হালকা গরম পানি পান করুন।
– বিছানার চাদর বা বালিশের কভার পাঁচ দিন পর পর ধুয়ে ব্যবহার করুন। মশারি সপ্তাহে একবার ধুয়ে ব্যবহার করুন।
– কিছু খাবারে সমস্যা হলে (যেমন গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, চিংড়ি, হাঁসের ডিম, বেগুন, কচু, পাকা কলা, আনারস, নারিকেল) সেগুলো কম খাবেন বা এড়িয়ে চলুন।
ধুলাবালি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন এবং ধূমপান পরিহার করুন। হাঁপানি বা অ্যাজমা কোনো কঠিন রোগ নয়, যদি মনোযোগী হন, এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকা সম্ভব। শীতে হাঁপানি রোগীদের আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং যথাযথ যত্ন নিতে হবে।
লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।