**কোলেস্টেরল ও হৃদরোগ**
কোলেস্টেরল একটি ধরনের চর্বি যা শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক, তবে রক্তে এর মাত্রা বেশি থাকলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কোলেস্টেরলের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেমন:
– **হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল)**: এই ধরনের কোলেস্টেরলকে “ভাল” কোলেস্টেরল বলা হয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
– **লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল)**: এটি “খারাপ” কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত, কারণ এটি রক্তনালীতে প্ল্যাক সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
– **ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি)**: এটি এক ধরনের চর্বি যা রক্তে থাকে এবং এলডিএল-এর চেয়ে কম ক্ষতিকর, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
– **টোটাল কোলেস্টেরল (টিসি)**: রক্তে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ।
যখন রক্তে এলডিএল এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর বিপরীতে, এইচডিএল এর মাত্রা যত বেশি থাকে, তত কমে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা।
খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বেশি চর্বিযুক্ত খাবার, বিশেষ করে পশু চর্বি, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কোলেস্টেরল রক্তে দুই উৎস থেকে আসে—একটি হলো খাদ্য চর্বি এবং অপরটি হলো আমাদের লিভার বা কলিজা যা নিজেই কোলেস্টেরল উৎপাদন করে।
কোলেস্টেরল শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র, স্টেরয়েড ও সেক্স হরমোন উৎপাদন, ত্বকের স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং কোষের গঠন নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। তবে, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালিতে জমে গিয়ে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যা ধীরে ধীরে হৃদরোগ, হার্টঅ্যাটাক, ব্রেইনস্ট্রোক ও কিডনি সমস্যা সৃষ্টি করে।
যেহেতু কোলেস্টেরল জমে গিয়ে ধীরে ধীরে ব্লক তৈরি করে, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ১০-২০ বছর সময় লাগে। তাই অনেকেই মনে করেন যে, কিছুদিনের মধ্যে কোলেস্টেরল কমিয়ে সুফল পাওয়া যাবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
এটি প্রমাণিত যে, প্রাকৃতিক উপায়ে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তা দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা অনেক ভালো। তবে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য মেডিসিন দীর্ঘদিন ব্যবহার করা দরকার, যা আর্থিকভাবে অনেকের জন্য অসুবিধাজনক হতে পারে। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে উপকারী।
**লেখক**: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।