**বাইডেনের নীতি পরিবর্তন: রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি দিল যুক্তরাষ্ট্র**
রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে। মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজের তথ্য অনুযায়ী, এই অনুমতি অনুযায়ী ইউক্রেনকে *এটিএসিএমএস* (Army Tactical Missile System) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে সক্ষম। বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন কিয়েভকে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার অনুমতি দেওয়া হয়নি, কারণ তারা উদ্বিগ্ন ছিল যে, এতে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসর আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
### কেন বাইডেন নীতি পরিবর্তন করলেন?
যুদ্ধের এক বছরেরও বেশি সময় পর, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে *এটিএসিএমএস* ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে, তবে তা কেবল ইউক্রেনের ভেতর রুশ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালাতে। রাশিয়ার অভ্যন্তরে সরাসরি হামলার অনুমতি না দেওয়ার যুক্তি ছিল, এতে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাবে। কিন্তু এখন বাইডেন প্রশাসন এই নীতি থেকে সরে এসেছে।
এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ সম্প্রতি খবর এসেছে যে, রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, যারা রাশিয়ার পক্ষ থেকে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এটি যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি না দেওয়ার অর্থ হলো, ইউক্রেনকে যুদ্ধের “হাত-পা বাঁধা” অবস্থায় রাখা।
### ইউক্রেনের জন্য কী প্রভাব?
এই নীতি পরিবর্তনের ফলে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালাতে পারবে। কুরস্কে ইউক্রেনের সেনারা এখন রুশ বাহিনীর সেনা, গোলাবারুদ, অবকাঠামো, এবং সামরিক স্থাপনায় *এটিএসএমএস* ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণ চালাতে পারবে। যদিও একা *এটিএসএমএস* ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ যুদ্ধের গতি বদলাতে না পারলেও, এটি ইউক্রেনকে অনেকটা এগিয়ে রাখবে এবং রাশিয়ার যুদ্ধের খরচ বাড়াবে।
বিশ্বের কূটনীতিকরা বলছেন, এটি যুদ্ধের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে না পারলেও রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করবে। একদিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনী কুরস্কে হামলা চালানোর ক্ষমতা পাবে, কিন্তু অন্যদিকে, এটি যুদ্ধের বিস্তার ঘটাতে পারে, বিশেষ করে রাশিয়া পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে।
### বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কারণ
বাইডেন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন এরই মধ্যে রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে *এটিএসএমএস* ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “মুখে মুখে হামলা হয় না, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিজেরাই কথা বলবে।”
একটি বড় কারণ হতে পারে রাশিয়া এবং উত্তর কোরীয় সেনাদের যৌথ উদ্যোগ, যা ইউক্রেনের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওলেক্সি গোনচারেঙ্কো এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভবিষ্যতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলাবে না।
### যুদ্ধের বিস্তার: কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানো হলে, এটি ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বাইডেন প্রশাসনের দীর্ঘদিনের শঙ্কা ছিল যে, ইউক্রেনের আক্রমণ রাশিয়ার ভূখণ্ডে যুদ্ধের পরিসর আরও বিস্তৃত করবে, যা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
এছাড়া, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমনের পর কী হবে, তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ট্রাম্পের মিত্ররা ইতোমধ্যেই বাইডেনের ইউক্রেন নীতি নিয়ে সমালোচনা করছেন। ট্রাম্পের ছেলে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “আমার বাবা যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান, তবে সামরিক শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু মহল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে চায়।”
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা কেবল ইউক্রেন নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং যুদ্ধের গতি বদলে দিতে পারে।