রংপুরে জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে একটি মামলায় ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করার অভিযোগ উঠেছে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান বিরুদ্ধে। গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামলার বাদী মাহীগঞ্জ ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদের একটি ভিডিও বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর এ অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই বিএনপি নেতা।
মামলার কাগজপত্র অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর রংপুর মহানগরের কোতোয়ালি থানায় জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে মামলা দায়ের করেন মামুনুর রশীদ। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে তিনি আহত হন। এই মামলায় ১৮১ জনকে আসামি করা হয়েছে, এবং অভিযোগ রয়েছে যে অনেক নিরীহ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১৬ নভেম্বর মামুনুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তিনি বলেন, তিনি আসলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মহানগর বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জামান ১৮১ জনের নাম দেন। ভিডিওটি ছিল রংপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কাওসার জামানের সঙ্গে মামুনুর রশীদের কথোপকথন।
ভিডিওতে কাওসার জামান মামুনুরকে বলেন, “১৮১ জনকে আসামি করে তুমি কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছ? এখানে নীলফামারীর লোকও আছে, অনেক নিরীহ মানুষও আছে যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কেন এমন করলা?”
এতে মামুনুর বলেন, “বিএনপির মহানগর আহ্বায়ককে (সামসুজ্জামান) আমি আড়াই মাস আগে ২৫টি নাম দিয়েছিলাম। কিন্তু ৯ বা ১০ তারিখ মামলাটি লেখা হয়। আমি অসংগতি দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এতগুলো নাম কেন? তিনি বললেন, এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। এতগুলো নাম দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না।”
আজ প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে কাওসার জামান বলেন, তিনি মামুনুরকে ডেকে নিয়ে ভিডিওর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামুনুর তাঁকে জানান, ১৮১ জন আসামির ব্যাপারে তিনি কিছু জানতেন না। ২৫ জনের তালিকা তিনি সরাসরি সামসুজ্জামানকে দিয়েছিলেন, তবে ১৮১ জনের ব্যাপারে সামসুজ্জামান তাকে বলেছিলেন, ‘‘এটি রাজনৈতিক মামলা, এভাবেই হয়।’’
কাওসার জামান আরও অভিযোগ করেন, মামলার নামে ‘মামলা-বাণিজ্য’ করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছেমতো আসামি নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর, মামলার বাদী মামুনুর রশীদ আত্মগোপন করেছেন এবং তাঁর দুটি মুঠোফোন নম্বরেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আজ সকালে রংপুর মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান বলেন, গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ও মহানগর বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য ওই ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, মামলার বাদীকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছেন, তবে মামলার আসামি নির্বাচন করা তাঁর দায়িত্ব নয়। উল্টো, তিনি কাওসার জামান ও রংপুরের কয়েকজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন।