বেড়িবাঁধ, জমির ছোট আল কিংবা জলাশয়ের পাড়—চারপাশে শুধু সবজির ক্ষেত আর সবজি। চোখ যত দূর যাচ্ছে, কেবলই সবজি আর সবজি। এমন বাম্পার ফলন সত্ত্বেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের দক্ষিণে শঙ্খনদের পাড়ে ফকিরের চরে এ বছর সবজির বিপুল উৎপাদন হয়েছে, কিন্তু এখানকার বাজারেও দামের ওঠানামা ঘটেনি।
কৃষকেরা জানান, আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের ফকিরের চর একটি বড় সবজিভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এখানে এক ফসলি জমিতে শীতকালে ব্যাপক সবজি চাষ হয়। হেমন্তকাল আসতেই চাষিরা সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এখানে বেড়িবাঁধের ভেতরে ও বাইরে, দুই ধরনের জমিতে সবজি ফলানো হয়। বেড়িবাঁধের বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উর্বর মাটিতে বেশি ফলন হয়, বিশেষ করে মরিচের। তবে এখনও বাজারে আসেনি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, তরমুজ ও ক্ষীরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে মোট ১,৩০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ফকিরের চরে অন্তত ৪০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এসব সবজির মধ্যে মরিচ, আলু, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বরবটি, মুলা, শিম, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শাক, করলা, ঢ্যাঁড়স, গাজর, তরমুজ, ক্ষীরা ও বাঙ্গি অন্তর্ভুক্ত। এ সবজিগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় এবং পাইকারেরা এখান থেকে কিনে নিয়ে যান, অনেক কৃষক ফকিরহাট বাজারেও বিক্রি করেন। তবে পাইকারি দামের তুলনায় খুচরা বাজারে সবজির দাম অনেক বেশি।
চাষিরা জানান, ফকিরের চর থেকে এখনো মরিচ, ফুলকপি, শিমের ভালো ফলন আসেনি। বর্তমানে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঢ্যাঁড়স, বরবটির দাম পাইকারি পর্যায়ে যথাক্রমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও ৪০ টাকা। অথচ বাজারে এসে এসব সবজি কিনতে হলে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দিতে হয়।
স্থানীয় চাষি মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, “ফকিরের চরের বেড়িবাঁধ ও উঁচু জায়গায় সারা বছর কোনো না কোনো সবজি চাষ হয়। কিন্তু চাষিরা যে দামে সবজি বিক্রি করেন, তাতে লাভ খুব কম। পরিশ্রমের পরে কোনোরকমে চলমান রাখি। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব সবজি বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন, ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে।”
ফকিরের চর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে মালঘর বাজারেও ফকিরহাট বাজারের মতো সবজি বিক্রি হয়। এখানে খুচরা বিক্রেতারা এক কেজি মিষ্টি কুমড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, এবং লাউ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।