দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২০:৩১

আজিমপুরের শিশুটি অপহরণের নেপথ্যে কী

গ্রেপ্তার নারীর চাচাতো ভাই পরিচয়ে তিন তরুণ আজিমপুরের সেই বাসায় যান

রাজধানীর আজিমপুর থেকে অপহৃত আট মাসের শিশু অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। উদ্ধার করা হয়েছে শিশুটিকেও। এখন শিশুটি মায়ের সঙ্গে আছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আজ শনিবার র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস শিশুটির অপহরণের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। গ্রেপ্তার নারীর নাম ফাতেমা আক্তার। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা মুনিম ফেরদৌস বলেন, আজিমপুরে অপহরণের শিকার আট মাসের কন্যাশিশুটির মা একটি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। তার বাবা একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ল্যাবে চাকরি করেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। আজিমপুরের বাসায় বাবার যাতায়াত ছিলও কম।

গ্রেপ্তার ফাতেমা আক্তারকে শিশু অপহরণের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে মুনিম ফেরদৌস বলেন, সপ্তাহখানেক আগে শিশুটির মায়ের সঙ্গে ফাতেমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সময় ফাতেমা নিজের প্রকৃত নাম-ঠিকানা লুকান। তিনি শিশুটির মায়ের কাছে নিজের নাম বলেন রাইসা, বাড়ি নওগাঁয়। নিজেকে অবিবাহিত হিসেবেও দাবি করেন।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেবল নাম-ঠিকানা মিথ্যা বলেননি ফাতেমা। ফাতেমা শিশুটির মায়ের কাছে দাবি করেন, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। পাশাপাশি একটি চাকরিও করেন। কিন্তু বেতন নিয়মিত নয়। তাই আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। একটি সাবলেট তিনি খুঁজছেন। পরে কয়েক দিন দুজনের মধ্যে মুঠোফোনে কথাও হয়। একপর্যায়ে ফাতেমাকে বাসার একটি কক্ষ সাবলেট হিসেবে দেন শিশুটির মা। এরপর ফাতেমা ওই বাসায় ১৪ নভেম্বর ওঠেন। বাসা ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে দুই হাজার টাকাও দেন।

র‍্যাব আরও বলেছে, বাসায় ওঠার পর ফাতেমা শিশুটির মাকে বলেছিলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে চাল নিয়ে আসবে তাঁর এক চাচাত ভাই। পরদিন সকালে চাচাত ভাই পরিচয়ে বাসায় ঢোকেন সুমন, হাসান ও রায়হান। রাতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, শিশুটির মাকে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন। এরপর ফাতেমা তিন সহযোগীকে নিয়ে শিশুটির মায়ের মুখের ভেতর কাপড় গুজে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর বাসা থেকে নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও পাঁচ থেকে ছয় ভরি স্বর্ণ ও দুটি মোবাইল লুট করে নিয়ে যান।

র‍্যাব কর্মকর্তা মুনিম ফেরদৌস বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, শিশুটিকে অপহরণের পর তাঁরা আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ের বাসায় যায়। সেখানকার একটি বাসায় শিশুটিকে রাখা হয়। তবে শিশু অপহরণের খবরটি দ্রুত গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ফাতেমা মুক্তিপণের জন্য আর তাঁর মাকে ফোন দেয়নি।

মুনিম ফেরদৌস আরও বলেন, শিশুটিকে অপহরণের সময় তার মায়ের দুটি মুঠোফোন নিয়ে যান ফাতেমা ও তাঁর সহযোগীরা। ওই মঠোফোন দিয়ে তিনি অপর সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এরসূত্র ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহায়তায় ফাতেমার অবস্থান শনাক্ত করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফাতেমা ১৫ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। গত বছর ফাতেমার বিয়ে হয়। তাঁর স্বামীর নাম সেলিম হোসেন। তিন থেকে চার মাস আগে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
মুনিম ফেরদৌস বলেন, ফাতেমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে অপহরণের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটি খতিয়ে দেখছে র‍্যাব। শিশুটির বাবাও র‍্যাবের নজরদারিতে রয়েছে।

 

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ