অসহায় সময়ে বিলাসী গাড়ি কেনা: জ্বালানি বিভাগের অধীনে থাকা তিন কোম্পানি ১৫ কোটি টাকায় নতুন জিপ কেনার অনুমোদন দিয়েছে, যদিও এর প্রয়োজনীয়তা ছিল না। গত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক মাস আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বোর্ড সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় ৫ কোটি টাকা ধরা হলেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গাড়ির দাম সাড়ে চার কোটি টাকার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল।
এ তিন কোম্পানি হল—বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স), এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এদের মধ্যে বিজিএফসিএল ও বাপেক্স গাড়ি কিনেছে, তবে তিতাস গ্যাসের গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত সরকারের পতনের আগেই স্থগিত হয়ে যায়।
জ্বালানি খাতের অধীনে এসব কোম্পানির চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বছরে এক বা দুইবার পরিদর্শনে যান। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। যদিও ব্যয় সংকোচন নীতির আওতায় এই গাড়িগুলো কেনার কোনো প্রয়োজন ছিল না, তারপরও জ্বালানি বিভাগের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় বিলাসবহুল জিপ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তৎকালীন জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলমের তত্ত্বাবধানে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি ওই তিন কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন এবং তার নির্দেশনায় গাড়ি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নূরুল আলমকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
এদিকে, এসব কোম্পানির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত চেয়ারম্যানদের জন্য পাজেরো ধরনের গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে নূরুল আলম গ্রেড-১ কর্মকর্তার মর্যাদা পেয়েছিলেন, তাই তাকে আরও উন্নতমানের গাড়ি সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। যদিও তৎকালীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নির্দেশনার বিষয়েও কিছু আলোচনা রয়েছে, তবে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ তিনি এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।
এছাড়া, গত বছরের আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যাতে বলা হয়, গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ কর্মকর্তাদের জন্য ২৭০০ সিসির নিচে গাড়ি কিনতে হবে এবং এর দাম হবে ট্যাক্স-ভ্যাটসহ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে। এর বেশি দামে কোনো সরকারি গাড়ি কেনার সুযোগ নেই।
বিজিএফসিএল, বাপেক্স, এবং তিতাসের কর্মকর্তারা জানান, গাড়ি কেনার জন্য এসব কোম্পানি তাদের বাজেটের আওতায় রাজস্ব খাতে অর্থ বরাদ্দ করেছিল। তবে, অনেক সময় প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে এসব গাড়ি কেনা হয় বলে জানিয়েছে তারা।
বিএফসিএল এবং বাপেক্সের ক্ষেত্রে, গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও বাপেক্সের গাড়িটি এখনও সরবরাহ হয়নি এবং এটি কোথায় রাখা হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এখনো এই গাড়ির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি এবং এটি এখনো বন্দরে পড়ে রয়েছে।
এই ঘটনায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিলাসিতার জন্য এসব গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেছেন, “কোম্পানির স্বাধীনতা থাকলেও তারা সরকারি নির্দেশনা মানতে বাধ্য। তবে তাদের বোর্ড এই সিদ্ধান্তে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। এসব অনিয়মের তদন্ত হলে আরও অনেক দুর্নীতি বেরিয়ে আসতে পারে।”