জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত পাঠ্যবইয়ের অতিরিক্ত বই পড়াচ্ছে বিদ্যালয়গুলো, আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। প্রথম শ্রেণিতে এনসিটিবির নির্ধারিত বই সংখ্যা আটটি হলেও বেশিরভাগ নামীদামী স্কুলে শিশুদের জন্য দুই থেকে পাঁচটি অতিরিক্ত বই পড়ানো হয়। অতিরিক্ত বই, খাতা, স্কেল বাক্স, পানির বোতল, টিফিন বক্স—সব মিলিয়ে স্কুল ব্যাগের ভারে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে, স্কুল ব্যাগের ওজন শিশুর শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করার কথা থাকলেও আজও তা কার্যকর হয়নি। ফলে বহু স্কুলে অতিরিক্ত বইয়ের চাপ শিশুরা এখনো বহন করছে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও মানসিকতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শিশুদের জন্য এনসিটিবির পাঠ্যক্রম অনুযায়ী নির্ধারিত বই হলো বাংলা, ইংরেজি, প্রাথমিক গণিত, পরিবেশ পরিচিতি, সংগীত, শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এবং ধর্ম। তবে ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণির শিশুদের আরও দুটি অতিরিক্ত বই পড়ানো হয়, এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রথম শ্রেণির শিশুরা চারটি অতিরিক্ত বই পড়ছে। বিভিন্ন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পাঁচটি পর্যন্ত অতিরিক্ত বই পড়ানো হয়।
শিক্ষাবিদরা বলেন, কোনো বিদ্যালয়ে এনসিটিবি নির্ধারিত বইয়ের বাইরে অতিরিক্ত বই পড়ানো হলে তা ক্ষতির কারণ হয়। অতিরিক্ত বই বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে অনেক বিদ্যালয় বই বিক্রি ও কোচিং বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করছে, যা নিয়মবিরুদ্ধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন। শিশুদের স্কুলে সময় বাড়ানো উচিত যাতে তারা খেলাধুলা ও শিক্ষা কার্যক্রম স্কুলেই সম্পন্ন করতে পারে।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত ও ভারী ব্যাগ শিশুর কাঁধে আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। একটি শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহনের ফলে তাদের শারীরিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের উচিত আইন বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।