শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধই তার একমাত্র খাদ্য হওয়া উচিত। কিন্তু মায়ের দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়ানোর জন্য কিছু বিশেষ যত্ন ও পন্থা অনুসরণ করা প্রয়োজন। মায়ের দুধের পর্যাপ্ততা অনেক কিছুই নির্ভর করে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর। তাই শুধু মায়ের খাবারের যত্ন নেওয়া নয়, পরিবারের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন যাতে মায়ের দেহ ভালো থাকে, মানসিক চাপ কমে এবং দুধের উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে।
### মায়ের দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়ানোর জন্য কিছু পরামর্শ:
1. **নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া**
মা-কে নিয়মিত খাবার খেতে হবে। দিনে ৬-৭ বার খাবার খাওয়া উচিত, যার মধ্যে ৩টি ভারী খাবার এবং ৩-৪ বার হালকা নাশতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
2. **তরল খাবার গ্রহণ**
মা-কে তরল খাবার বেশি খেতে হবে, যেমন সুপ, ডাবের পানি, ফলের রস অথবা আস্ত ফল।
3. **ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রোধ**
দুধ ও দুধজাত খাবার যেমন দই, পায়েস, পুডিং বা পনির নিয়মিত খেতে হবে। যাদের ল্যাকটোজ সহ্য হয় না তারা গাঢ় সবুজ শাক-সবজি ও ছোট মাছ খেতে পারেন।
4. **শর্করা ও আমিষের ভারসাম্য**
বেশি শর্করা জাতীয় খাবার না খেয়ে, আমিষজাত খাবার যেমন ডিম, মাংস, মাছ ও ডাল খেতে হবে।
5. **কর্মজীবী মায়েদের জন্য দুধ সংরক্ষণ**
কর্মজীবী মায়েরা দুধ এক্সপ্রেস করে সংরক্ষণ করতে পারেন। একবার খাওয়ানোর পর, পরবর্তী খাওয়ানোর আগে দুধ এক্সপ্রেস করা উচিত।
6. **দুধের পরিমাণ বাড়াতে কিছু খাবার**
কাঠবাদাম, কালিজিরা, লাউ, পালং শাক, মেথি, ওটস ইত্যাদি দুধের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
### উদাহরণস্বরূপ এক দিনের খাদ্য তালিকা:
– **সকাল:** দুটো রুটি, এক কাপ সবজি, একটা ডিম সেদ্ধ।
– **মধ্য সকাল:** একটা কলা, পাঁচ-সাতটা কাঠবাদাম, এক কাপ দুধ।
– **দুপুর:** দুই কাপ ভাত, এক কাপ ডাল, দুই পিস মাছ/মুরগির মাংস, এক কাপ মিক্সড সবজি, কালিজিরার ভর্তা, সালাদ।
– **বিকাল:** ওটস আর বাদামের লাড্ডু, ফল।
– **রাত:** রুটি দুইটা বা ভাত এক কাপ, ডাল এক কাপ, লাউ তরকারি, মাছ/মুরগির মাংস দুই পিস ও লেবু।
– **রাতের নাশতা:** এক কাপ দই + একটা খেজুর।
– **শোবার আগে:** এক কাপ দুধ, দুই পিস প্লেইন টোস্ট।
এই ধরনের খাবার খেলে মায়ের দেহ সুস্থ থাকে এবং দুধের উৎপাদন বাড়ে, যা শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী।