কয়েক বছর আগে রোগীরা বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসে বলতেন, “বাংলাদেশে এত পরীক্ষা করানো হলো, কিন্তু কেউ আমার রক্তে ভিটামিন ডি কম থাকাটা ধরতে পারল না!” তবে, আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ান এন্ডোক্রাইন সোসাইটিগুলি একমত যে, শুধুমাত্র প্রয়োজন হলে নয়, সবার ভিটামিন ডি পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই। যদিও এই ব্যয়বহুল পরীক্ষা এখন অনেকটা রুটিন পরীক্ষা হয়ে উঠেছে, ভিটামিন ডি আসলে কোনো নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা নয়।
যেমন, খালি গায়ে নদী পার করা মাঝি কিংবা কৃষক মাঠে কাজ করার সময় হয়তো খাবারের পুষ্টিমান সঠিক থাকে না, তবে ভিটামিন ডি পরীক্ষা করলে তার রক্তে যথাযথ পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। কারণ, ভিটামিন ডি আরেকটি পরিচয়ে “সানশাইন ভিটামিন”। সূর্যের আলো ত্বকে পড়লে, সেখানে থাকা কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়, যা পরে রক্তে মিশে লিভার এবং কিডনিতে গিয়ে শক্তিশালী হয়ে সক্রিয় ভিটামিন ডিতে পরিণত হয়। এর কাজ হলো রক্তে ক্যালসিয়াম শোষণ করে সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা, হাড় শক্ত রাখা, পেশির শক্তি বজায় রাখা, এবং কিছু রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এখন, একে একটি হরমোন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এর বিপাকীয় প্রভাব অনেক।
সূর্যের আলোতে অতিবেগুনি রশ্মি (UV) থাকে, যা ভিটামিন ডি উৎপাদনে সাহায্য করে। তবে ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেশি থাকলে ভিটামিন ডি উৎপাদন কম হয়, কারণ মেলানিন আমাদের সানস্ক্রিনের মতো কাজ করে এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। সাদা ত্বকের তুলনায় কালো ত্বকে ভিটামিন ডি কম উৎপন্ন হয়।
**ভিটামিন ডি কিভাবে পাবেন**
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন, প্রতিটি সেশনে ১০ থেকে ৩০ মিনিট রোদে থাকলেই পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব। তবে, শরীর ঢেকে রাখলে কিংবা সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ভিটামিন ডি উৎপাদন কমে যায়। শিশু ও বয়স্কদের জন্য ভিটামিন ডি বেশি প্রয়োজন, অন্যদের দৈনিক ৬০০-৮০০ ইউনিট প্রয়োজন।
**ভিটামিন ডি কমলে কী হতে পারে**
ভিটামিন ডির অভাবে শিশুদের রিকেট এবং বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হতে পারে। এতে হাড়ে ব্যথা, হাত-পা বা গা অবসন্ন হতে দেখা যায়। পরবর্তীতে হাড় ভঙ্গুর হয়ে অস্টিওপোরোসিস দেখা দিতে পারে, যার ফলে হালকা আঘাতেও হাড় ভেঙে যেতে পারে। ভিটামিন ডি কমলে আরও অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন হার্টের সমস্যা, ক্যানসার, মেটাবলিক সিনড্রোম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়ানো। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ছিল, তারা কোভিড-১৯ এর প্রকোপ এবং জটিলতা কমে গেছে।
— অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ আমিন, বিভাগীয় প্রধান, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা