অন্তর্বর্তী সরকার ১০টি সংস্কার কমিশন করলেও এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে সরকার স্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছে না। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন নিয়ে জনগণ ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। আজ শুক্রবার এক সমাবেশে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতারা এ কথা বলেছেন।
বাসদের ৪৪তম ও রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে লাল পতাকা মিছিল করেন বাসদের নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচারের অঙ্গীকার ছিল। এ আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের লাঞ্ছনার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু গত ৫৩ বছর শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ শাসন করেছে। ফলে মানুষের মুক্তি আসেনি।
বাসদ মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর পরাজিত হলেও গত ৫৩ বছরে ধনিক বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়েছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ১৯৯০ সালের সামরিক শাসনবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করাই ছিল এসব অভ্যুত্থানের লক্ষ্য।
এই পরিস্থিতিতে অহেতুক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করতে আহ্বান জানিয়েছে বাসদ। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে দলটি।
বাসদ নেতারা বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনের বিপরীতে একটা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্য ও দুর্নীতির অবসান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আজকে (৮ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু এখনো নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে আছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ দলবদ্ধ সহিংসতায় নিহতের ঘটনা বন্ধ হয়নি। মজুরি চাইতে গিয়ে শ্রমিকদের এখনো গুলি খেয়ে নিহত হতে হচ্ছে। অথচ ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমিকেরা অকাতরে জীবন দিয়েছেন।
বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড জুলফিকার আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।