দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৫:১৭

“৩০ বছর পর অবশেষে বাবাকে অলৌকিকভাবে খুঁজে পেয়েছি”

লন্ডনের ফাইভ গাইজ কোভেন্টের সামনের ফুটপাতে বসে ছিলেন এক হাড়জিরজিরে বৃদ্ধ, গৃহহীন ও হতদরিদ্র। দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি মেয়ে, কিছুক্ষণ ইতস্তত করার পর তিনি এগিয়ে গেলেন বৃদ্ধের দিকে। মেয়েটি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার নাম কি ওমর?” বৃদ্ধ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। এরপর আর কোনো কথা নয়, দুজনই একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর পর এভাবেই বাবাকে ফিরে পান যুক্তরাজ্যের তরুণী এপি এলিস।

 

বাবা-মেয়ের সেই আবেগঘন মুহূর্ত পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ার পাশাপাশি ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপে ধরা পড়ে। ছোটবেলায় হারানো বাবাকে ফিরে পাওয়ার গল্পটি এলিস শেয়ার করেছেন বিবিসির সঙ্গে। এলিস তখন একেবারেই শিশু, সবে হাঁটতে শিখেছেন, যখন ১৯৯৪ সালে কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাবা ওমর হারিয়ে যান। পরবর্তী ৩০টি বছর এলিস প্রতিটি মুহূর্তে বাবাকে খুঁজে ফিরেছেন। যদিও বাবার স্মৃতিতে ছিল শুধু কিছু চিঠি, জন্মদিনের কার্ড ও কিছু ছবি, এসবই তাঁকে বাবাকে খোঁজার প্রেরণা জুগিয়েছে।

 

১৮ বছর বয়সে এলিস সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি যেভাবেই হোক বাবাকে খুঁজে বের করবেন। তিনি ওমরের পরিচিত মানুষদের জিজ্ঞেস করা শুরু করেন। কেউ কেউ তাঁকে জানান, তাঁর বাবা হয়তো এখন গৃহহীন অবস্থায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। এলিস গৃহহীনদের সহায়তা সংস্থা ও কাউন্সিল এজেন্সিগুলোর কাছে বাবার খোঁজ শুরু করেন, যদিও তথ্য সুরক্ষার কারণে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন ছিল। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যান।

 

দুই বছর আগে নভেম্বর মাসে এলিস টেলিভিশনের বিবিসি লন্ডনের এক বিশেষ প্রোগ্রামে নজর করেন। সেখানে দেখেন, পল-ওয়ালকট নামের এক ব্যক্তি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে লন্ডনের রাস্তায় ঘুমন্ত গৃহহীনদের মাঝে খাবার বিতরণ করছেন। এলিস পল-ওয়ালকটকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বাবার তথ্য দিয়ে জানতে চান, “আপনি কি আমার বাবাকে চেনেন?”

 

২০ মিনিট পরই পল উত্তরে লেখেন, “হ্যাঁ, আমি আপনার বাবাকে চিনি।” এলিস বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তার পর মুহূর্তেই নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে। বাবার সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, শুরুতেই কী বলবেন—এমন নানা দুশ্চিন্তা তাঁর মনে আসে। অন্যদিকে পল দ্রুত ওমরের খোঁজে বের হন, গিয়ে দেখেন যে ওমর সেই নির্দিষ্ট জায়গায়ই আছেন।

 

ওমরের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করে পল তা এলিসকে পাঠান। তিন দশক পর বাবার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে এলিস আবেগে ভেসে যান। এরপর এলিস আসা পর্যন্ত পল ওমরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন, যাতে এলিস সহজে তাঁকে খুঁজে পেতে পারেন। এলিস বলেন, “আমি খুব আশা করিনি, তবুও ৩ নভেম্বর গিয়ে তাঁকে খুঁজে পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার নাম কি ওমর?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরি। কী যে এক পরাবাস্তব অনুভূতি, মনে হলো তিনি আমার কত আপন। পুরো দিনটা আমরা পার্কে কাটাই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিই। পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে অলৌকিক।”

 

এলিস বাবাকে খুঁজে পাওয়ার পুরো কৃতিত্ব দেন পলকে। তিনি বলেন, “লন্ডন শহরে কেউ যদি কাউকে খুঁজে পেতে চান, বিশেষ করে গৃহহীন কাউকে, তবে পলের সাহায্য নিন। আমার বিশ্বাস, পলকে এক ঘণ্টা সময় দিলেই তিনি খুঁজে এনে দিতে পারবেন।”

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট