দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৮:৪৬

ট্রাম্পের জয়ে বিশ্ববাজারে বেড়েছে ডলারের দর, বিটকয়েনের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে চাঙা ভাব এসেছে। মার্কিন ডলার ও বিটকয়েনের মূল্যও বেড়েছে। আট বছরের মধ্যে গতকাল বুধবার এক দিনে মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিটকয়েনের দামও এযাবৎকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে।

ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প কর হ্রাস ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এতে নীতি সুদহার হ্রাসের গতি কমতে পারে। নীতি সুদহার বাড়তি থাকলে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক সঞ্চয় পরিকল্প ও বিনিয়োগ থেকে বেশি মুনাফা পাবেন। খবর বিবিসির

গতকাল মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শেয়ার ও মুদ্রাবাজার নড়েচড়ে বসেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী কী ঘটল:

১. যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শেয়ার সূচক বেড়েছে, বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ার ভালো করেছে।

২. পাউন্ড, ইয়েনসহ বিভিন্ন বড় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, গত ৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

৩. যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর সূচক এফটিএসই ১০০ দিনের শুরুতে বেড়ে যায়, যদিও দিন শেষে তা কিছুটা কমেছে।

৪. ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, গত জুন মাসের পর যা সর্বনিম্ন।

৫. জাপানের বাজারে প্রধান সূচক নিক্কি ২২৫ সূচক বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি জাপানি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

৬. চীনের মূল ভূখণ্ডে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স অবশ্য কিছুটা কমেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গতকাল বিটকয়েনের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বের বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পরাশক্তি বানানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর এই প্রতিশ্রুতির কারণে বিটকয়েনের মূল্য ৬ হাজার ৬০০ ডলার বেড়ে ৭৫ হাজার ৯৯৯ ডলারে উঠেছে।

বিষয়টি হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের অমিল দেখা যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিলেও ট্রাম্প তার উল্টো অবস্থান নিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ব্যয়ে যে অপচয় হয়েছে, তার নিরীক্ষার দায়িত্ব দিতে চান তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে। ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করছেন। তাঁর কোম্পানি টেসলা ২০২১ সালে বিটকয়েনে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল; যদিও বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামা করে। মাস্কের বিনিয়োগ বিটকয়েনের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে গতকাল টেসলার শেয়ারের মূল্য ১৪ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ইলন মাস্ক নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর এই সমর্থন এবং ট্রাম্পের ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের কারণে বিটকয়েনের মূল্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এদিকে গতকাল মার্কিন বন্ডের সুদহার বেড়েছে।

বাজারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নতুন সরকার আরও বেশি ঋণ করবে। এই ক্রমবর্ধমান ঋণের সঙ্গে যে ঝুঁকি জড়িয়ে আছে, তার প্রিমিয়াম হিসেবে বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত সুদ দাবি করছেন।

২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম মেয়াদেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। তখন তাঁর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল চীন। কিন্তু এবারে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, নির্বাচিত হলে এই বাণিজ্যযুদ্ধের পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছেই। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে কেবল চীন নয়, বরং বিশ্বের সব দেশই তাঁর কঠোর বাণিজ্যনীতির কবলে পড়বে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলোর ওপর এই প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বাস্তবতায় ট্রাম্পের সঙ্গে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস।

ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, তার ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হবে ৬০ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি এমনকি ১০০ শতাংশও হতে পারে।

পররাষ্ট্রনীতিতে আগের জামানার ধারাবাহিকতায় বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থান নেবেন। ফলে বাইডেন প্রশাসন যেভাবে চীনের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে তাইওয়ানের সহায় হয়েছিল, ট্রাম্পের জামানায় তা হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তাইওয়ান বিশ্বের অন্যতম প্রধান কম্পিউটার চিপ উৎপাদনকারী দেশ। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই চিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেনের চলমান শাসনামলে তাইওয়ান নিয়েও চীন-মার্কিন উত্তেজনা বেড়েছে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট