বাজারের উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে ডিম, দুধ, মাছ বা মাংস বাদ দিচ্ছেন। ফলে খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ এবং ‘নকশা’র নিয়মিত রন্ধনশিল্পী ফারাহ্ সুবর্ণা মিলে ‘অধুনা’কে পরামর্শ দিয়েছেন কীভাবে কম খরচে প্রতিদিনের খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। একইসঙ্গে, চারজনের পরিবারের জন্য সাত দিনের একটি নমুনা খাবারের তালিকাও তাঁরা প্রস্তুত করেছেন, যাতে প্রতিদিনের পুষ্টি ও সাশ্রয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
### পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ
শামছুন্নাহার নাহিদের মতে, পুষ্টির চাহিদা বয়স, ওজন এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। একটি পরিবারে চারজন সদস্যের জন্য পুষ্টির চাহিদা নির্ধারণ কঠিন, কারণ তাদের বয়স বা শারীরিক অবস্থা এক নয়। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকা জরুরি। শর্করা চাল বা আটার মাধ্যমে পূরণ করা যায়, প্রোটিন পাওয়া যাবে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের পাশাপাশি ডাল, ছোলা ও বাদাম থেকে। এছাড়া দৈনিক খাবারের তেল থেকেই প্রয়োজনীয় চর্বি মিলতে পারে। শাক-সবজি ও ফলমূলের মাধ্যমে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
### কম খরচে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার উপায়
শর্করা ভাত বা রুটির পরিবর্তে চিড়া, মুড়ি বা নুডলস থেকেও পাওয়া যেতে পারে। প্রোটিনের জন্য মাছ বা মাংসের পরিবর্তে ডিম একটি সাশ্রয়ী বিকল্প। প্রতিদিন শাকসবজি বা সালাদে সাশ্রয়ী উপাদান বেছে নিন এবং বেশি পদ রান্না না করে সহজেই দুই-এক পদে খাবার সমৃদ্ধ করতে পারেন। এছাড়া, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবু বা কাঁচা মরিচ রাখলে ভিটামিন সি পাওয়া যাবে।
### রান্নায় খরচ বাঁচানোর কৌশল
ফারাহ্ সুবর্ণার পরামর্শ হলো, দুইবেলার খাবার একসঙ্গে রান্না করলে সময় ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। যারা ফ্রিজ ব্যবহার করেন, তারা দু-তিন দিনের রান্না একবারে করে রেখে দিতে পারেন। সপ্তাহের শুরুতেই খাবারের পরিকল্পনা করে বাজার করলে অতিরিক্ত খরচ এড়ানো যায়। মাছ-মাংস প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে কয়েকবার সেগুলো খাদ্যতালিকায় রাখলে খরচ কমবে।
### সাত দিনের নমুনা খাবারের তালিকা
সকালের নাশতায় রুটি, ভাজি, ডিম বা ডাল রাখতে পারেন। দুপুর ও রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার (যেমন: ডিম, মাছ, মাংস) ব্যবহার করুন। কিছু উদাহরণ:
– **শনিবার**: ভাত, আলু বা বেগুন ভর্তা, মাছের ঝোল, ডাল।
– **রোববার**: ভাত, কলমিশাক ভাজি, কাঁচকলা দিয়ে মাছের ঝোল।
– **সোমবার**: ভাত বা রুটি, ঢ্যাঁড়সভাজি, আলু ও মুরগির ঝোল।
– **মঙ্গলবার**: ভাত, লালশাক ভাজি, মাছ ভুনা ও পাতলা ডাল।
– **বুধবার**: ভাত, কচুরমুখি ভর্তা, মাছভাজা ও ডাল।
– **বৃহস্পতিবার**: ভাত, আলু–করলা ভাজি, পাবদা মাছ ও পাতলা ডাল।
– **শুক্রবার**: খিচুড়ি বা ভাত, পটোলভাজা, মুরগি বা গরুর একটি পদ।
প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে লেবু বা কাঁচা মরিচ রেখে সহজে ভিটামিন সি নিশ্চিত করা যায়।