দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘শিকল ভাঙার পদযাত্রা’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীতে এই পদযাত্রায় নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকারকর্মী এবং সংস্কৃতিকর্মী নারীরা অংশ নেন। তাঁরা ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন।
পদযাত্রাটি শুক্রবার রাত ১২টায় রাজধানীর শাহবাগ থেকে শুরু হয় এবং প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সিটি কলেজ, কলাবাগান, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
লেখক ও শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিকল ভাঙার পদযাত্রার’ মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধর্ষণের বিচার করা হয় না এবং গণমাধ্যমও এ বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করে না। কুমিল্লায় তনু (সোহাগী জাহান) অথবা রাজধানীতে মুনিয়া (মোসারাত জাহান) হত্যার বিচার হয়নি। নতুন একটি দেশ গঠনের জন্য বিচারহীনতার বিষয়টি সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি।”
পদযাত্রার আয়োজকদের একজন প্রাপ্তি তাপসী জানান, নারীর ওপর নিপীড়ন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামোর পরিবর্তন দাবি জানাতেই এই আয়োজন। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের পদযাত্রা চতুর্থবারের মতো আয়োজিত। তিনি আরও বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসক মৌমিতা দেবনাথকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে শিকল ভাঙার পদযাত্রা থেকে সংহতি জানানো হয়েছে।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন প্রথম আলোকে বলেন, “আমরা একটি নারীবান্ধব সমাজ চাই, যেখানে নারী তার পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা পাবে। শুধুমাত্র নারী নয়, প্রত্যেক মানুষকেই তার স্বাধীনতা বুঝে পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যেখানে নাগরিক ও মানবাধিকার রক্ষিত থাকবে।” তিনি বলেন, মেয়েদের বঞ্চনা এবং উত্তরাধিকার আইন, শিশুর অভিভাবকত্ব আইন—এসব বিষয়ে সমতা আনা জরুরি, যা সার্বিক পরিবর্তন ঘটাবে।
আয়োজকদের মতে, সরকারের দায়িত্ব হলো দিনে কিংবা রাতে, স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নারীকে নিরাপত্তা প্রদান করা। “মেয়েরা এত রাতে বাইরে কেন?”—এ ধরনের মন্তব্য আজীবনের জন্য বন্ধ হওয়া উচিত।
এই পদযাত্রা থেকে ১৩টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে সারা দেশে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন সংস্কার করা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে অপরাধের শিকার মানুষকে দোষারোপ বন্ধ করা, এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধর্ষণের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রভৃতি।
পদযাত্রার অংশগ্রহণকারীরা বলেন, দেশে নারী-পুরুষের সমান অধিকার এখনো কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। রাষ্ট্র আজও একজন নারীর সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং নিপীড়ন দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটলেও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ব্যর্থ।
পদযাত্রা থেকে সব শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয় এবং যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের জন্য ৯০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।