প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য চিকিৎসক এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী, শ্বশুর, ভাইসহ ১০ আত্মীয়ের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য মনসুর রহমান, তাঁর স্ত্রী মাহফিলা আফরীফ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াফা ইসলামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত আজ বুধবার এসব আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম।
দুদক ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য চিকিৎসক এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আজ আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। তাতে বলা হয়, এইচ বি এম ইকবালের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। পরে আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
মনসুর ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩ কোটি টাকা
এ ছাড়া রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মাহফিলা আফরীফের ৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম। তাতে বলা হয়, সাবেক সংসদ সদস্য মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাতে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। মনসুর ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৫ টাকার স্থিতি পাওয়া গেছে। তাঁদের ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের টাকা হস্তান্তর ও স্থানান্তর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। আদালত পরে তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে জাহাজ, ভাই-বোন ও শ্যালিকার নামে ফ্ল্যাট-জমি
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী, ভাইসহ ১০ জনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তাতে বলা হয়, এপিবিএনের বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার খাগড়াছড়িতে কর্মরত রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাই–বোন, শ্যালিকাসহ বিভিন্ন জনের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেন। দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি স্ত্রী ফারহানার নামে গোপালগঞ্জে ১ দশমিক ১৬ একর জমি ক্রয় করেছেন। শ্বশুর মজিবুরের নামে নাখালপাড়ায় দুটি বহুতল ভবন রয়েছে। এ ছাড়া ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে বহুতল ভবন, ভাই এস এম আমিনুল ইসলামের নামে ফ্ল্যাট, ভাই এস এম দিদারুল ইসলামের নামে ফ্ল্যাটসহ ১০ জনের জমি রয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে দুটি জাহাজ থাকার তথ্য আদালতে জমা দিয়েছে দুদক। শেখ রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী, ভাইসহ ১০ আত্মীয়ের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।