থিয়েটার দু সাতেলে—প্যারিসের বিখ্যাত থিয়েটার হল বা অপেরা হাউস এটা। কত হাসি আর কান্নার গল্প যুগের পর যুগ এখানে উপস্থাপিত হয়ে এসেছে। একেকটি থিয়েটার বা অপেরা সন্ধ্যায় শিল্প আর সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে থিয়েটার দু সাতেলের প্রাঙ্গণ। প্যারিসের স্থানীয় সময় আজকের সন্ধ্যায়ও থিয়েটার দু সাতেলের প্রাঙ্গণ মুখরিত হবে। আজকের সন্ধ্যাটা অবশ্য ফুটবল দুনিয়ার মানুষের জন্য। আজ যে এখানেই ঘোষণা করা হবে এ বছরের ব্যালন ডি’অর জয়ীর নাম।
আজকের মুখরিত সন্ধ্যায় ব্যালন ডি’অর নামের যে ‘অপেরা’ মঞ্চস্থ হবে থিয়েটার দো সাতেলেতে, সেখানে হাসি ফুটবে কার মুখে? এ অপেরায় যিনি বর্ষসেরার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর জিতবেন, তিনিই নায়ক; হাসি তো তাঁর মুখেই ফুটবে। কে হবেন সেই নায়ক—ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, নাকি রদ্রি? প্রতিবছর পুরস্কারটি যারা দেয়, সেই ফ্রাঞ্চ ফুটবল সাময়িকী ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে থাকা ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা আগেই দিয়েছে।
ইউরোপের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হিসাব আর বিশ্বজোড়া ফুটবল বিশ্লেষকদের চুলচেরা বিশ্লেষণ বলছে, এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ে মূল লড়াইটা হবে ভিনিসিয়ুস ও রদ্রির মধ্যে। ভিনিসিয়ুস ফরোয়ার্ড আর রদ্রি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। মাঠে দুজনের ভূমিকা দুই রকম।
৩০ জনের সবাই তো আর সমানভাবে এগিয়ে নেই, সেটা থাকার কথাও নয়। ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে দৌড়ে আছেন ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম, জার্মান তারকা টনি ক্রুস, স্পেনের দানি কারবাহাল, ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ আরও দুজন। বার্সেলোনা থেকে আছেন তরুণ তুর্কি লামিনে ইয়ামাল, ম্যানচেস্টার সিটি থেকে আছেন স্পেনের রদ্রি আর নরওয়ের আর্লিং হলান্ডের মতো বড় নাম।
ভিনিসিয়ুসই ব্যালন ডি’অর জিতবে। এটা ও ৩ গোল করেছে বলে বলছি না। এটা বলছি, কারণ ও অনন্য।
তবে ইউরোপের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হিসাব আর বিশ্বজোড়া ফুটবল বিশ্লেষকদের চুলচেরা বিশ্লেষণ বলছে, এবারের ব্যালন ডি’অর জয়ে মূল লড়াইটা হবে ভিনিসিয়ুস ও রদ্রির মধ্যে। ভিনিসিয়ুস ফরোয়ার্ড আর রদ্রি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। মাঠে দুজনের ভূমিকা দুই রকম। মাঠে যাঁর যেটা কাজ, সেই বিবেচনা থেকে পরিসংখ্যান ও গবেষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অপ্টা ২০২৩-২৪ মৌসুমে এ দুই তারকার পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে পাওয়ার পয়েন্টিং করেছে।
রদ্রি পুরস্কারটি জিতলে আমরা খুব খুশি হব। পুরস্কার রদ্রির প্রাপ্য। কিন্তু আরেকজনেরও হয়তো এটা প্রাপ্য। হবে তো ভোটাভুটি।
পেপ গার্দিওলা, ম্যান সিটি কোচ
গত মৌসুমে ভিনিসিয়ুস ব্রাজিল ও রিয়ালের হয়ে সব মিলিয়ে ৪৯টি ম্যাচ খেলেছেন। ২৬টি গোল করেছেন, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১১টি। প্রতি ১৪৬ মিনিটে গোল করেছেন ভিনি। ড্রিবল করেছেন ৪১.৬ শতাংশ। জিতেছেন তিনটি শিরোপা—চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। স্পেন ও ম্যানসিটির হয়ে সব মিলিয়ে রদ্রি ম্যাচ খেলেছেন ৬৩টি। গোল ১২টি, গোলে সহায়তা ১৬টি। গোলপ্রতি গুরুত্বপূর্ণ পাস ১.৬৭। বড় সুযোগ তৈরি করেছেন ১১টি। শিরোপা জিতেছেন চারটি—স্পেনের হয়ে ইউরো আর সিটির জার্সিতে প্রিমিয়ার লিগ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপ। সব মিলিয়ে অপ্টার পাওয়ার পয়েন্টিংয়ে ভিনি পেয়েছেন ৭.৩৬ পয়েন্ট, রদ্রি ৭.৮৯।
অপ্টার পয়েন্টিংয়ে রদ্রি এগিয়ে থাকলেও রিয়ালের ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তি এবারের ব্যালন ডি’অর ভিনিসিয়ুসের হাতেই দেখছেন। গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে রিয়ালের ৫-২ গোলের জয়ে ভিনি হ্যাটট্রিক করার পর আনচেলত্তি বলেছিলেন, ‘ভিনিসিয়ুসই ব্যালন ডি’অর জিতবে। এটা ও ৩ গোল করেছে বলে বলছি না। এটা বলছি, কারণ ও অনন্য।’ ম্যানসিটির কোচ অবশ্য রদ্রির পক্ষে কথা বলেছেন অন্যভাবে, ‘রদ্রি পুরস্কারটি জিতলে আমরা খুব খুশি হব।’
গার্দিওলা এরপর ব্যালন ডি’অর পুরস্কার নিয়ে চরম একটি বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। পুরস্কারটি দেওয়া হবে নির্বাচিত ক্রীড়া সাংবাদিক, জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়কের ভোটে। বিষয়টি যেহেতু ভোটের, পুরস্কার জয়ের দৌড়ে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে যে কেউ জিততে পারেন। এটাই যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন গার্দিওলা, ‘পুরস্কার রদ্রির প্রাপ্য। কিন্তু আরেকজনেরও হয়তো এটা প্রাপ্য। হবে তো ভোটাভুটি।’
দেখা যাক, সেই ভোটাভুটি বাংলাদেশ সময় রাত আজ ১টায় কার গলায় বিজয়ের মালা পরায়!