সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্তানদের জীবনের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা নতুন কিছু নয়। তবে যখন সন্তান আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়, তখন তা অজান্তেই বিপদের মুখোমুখি করতে পারে। সন্তানের ছবি ও ভিডিওকে কনটেন্ট বানানোর মাধ্যমে আপনি মূলত ‘শ্যারেন্টিং’ করছেন। ‘শ্যারেন্টিং’ একটি সংমিশ্রণ শব্দ, যেখানে ‘শেয়ারিং’ ও ‘প্যারেন্টিং’ মিলেছে। এটি অতিরিক্ত ডিজিটাল শেয়ারিংয়ের আরেকটি রূপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধিকাংশ মানুষই নিজেদের ছবি এবং দৈনন্দিন ঘটনাবলি নিয়মিত ভাগাভাগি করেন। কিন্তু যখন এই শেয়ারিং সন্তানের ক্ষেত্রেও ঘটে, তখন সন্তানের ছবি ও ঘটনাগুলো টাইমলাইনে ছড়িয়ে যায়, যা শ্যারেন্টিংয়ের সূচনা করে।
### কীভাবে শুরু হয়
একবার ভাবুন, গত এক বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতজনের সন্তানের জন্ম সংবাদ পেয়েছেন? পরে তাদের প্রোফাইল থেকে সন্তানদের ছবির আপডেট, কী খাচ্ছে, কী করছে, হামাগুড়ি দিচ্ছে, হাঁটছে—এমন নানা তথ্য আপনার সামনে এসেছে। এসব দেখে আপনি হয়তো খুশি হন, কিন্তু যারা ছবি পোস্ট করছেন, তাদের মনেও হয়তো একই আনন্দ কাজ করে। এভাবেই শ্যারেন্টিং শুরু হয়, যেখানে মা-বাবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্তানরাই প্রধান কনটেন্ট হয়ে ওঠে। তাদের স্কুলজীবন, দৈনন্দিন কার্যকলাপ, সুখ-দুঃখ—সবকিছুই ফেসবুকে প্রকাশ পায়। অনেকে তো এসব স্মৃতি হিসেবে রাখেন, যা সন্তানের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
### কী বিপদ
শ্যারেন্টিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যে। শিশুদের মানসিক অবস্থায় পারিপার্শ্বিকতা বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাবা-মায়ের শেয়ার করা তথ্য, ছবিগুলি শিশুর ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া, নেতিবাচক মন্তব্য ও হাসি-ঠাট্টা তাদের মানসিকতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর শৈশবের এ ধরনের অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক এবং স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এছাড়া, বেশি ছবি ও তথ্য শেয়ার করা সন্তানের গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্পর্কের জন্যও ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। এক সময় সন্তান লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারে, যার ফলে মা-বাবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারে।
### অন্য বিপদ
শ্যারেন্টিংয়ের মাধ্যমে সন্তানের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে। ইন্টারনেটে প্রকাশিত তথ্য মানেই তা সবার জন্য উন্মুক্ত। যখন আপনি সন্তানের স্কুলের ফলাফল শেয়ার করছেন, তখন কেউ হয়তো আপনার সন্তানের সব তথ্য জেনে যাচ্ছে। ডিজিটাল যুগে সব তথ্য সহজেই ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে, যা সন্তানের এবং তার বন্ধুবান্ধবদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
### তাহলে কি একেবারেই শেয়ার করা যাবে না?
এমন নয় যে কিছু শেয়ার করা যাবে না, বরং গোপনীয়তা বজায় রেখে শেয়ার করা সম্ভব। অনেক মা-বাবা সন্তানের মুখ ঢেকে ছবি পোস্ট করেন অথবা ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রেখে গল্প করেন। স্কুলের ফলাফল শেয়ার করতে চাইলে স্কুলের নাম গোপন রাখেন এবং ছবি দেওয়ার আগে যথাযথ দেখভাল করেন।
মা-বাবারা অনেক সময় মনের অজান্তেই শ্যারেন্টিং শুরু করেন। প্রথমে হয়তো দু-একটা ছবি শেয়ার করেন, কিন্তু ধীরে ধীরে পুরো প্রোফাইলই সন্তানের ছবি আর গল্পে ভরে যায়। তাই শ্যারেন্টিং প্রতিরোধের জন্য সচেতন থাকা প্রয়োজন। সন্তানের দেখভাল করার সময় যেমন নিজেদের প্রশ্ন করেন, ইন্টারনেটে তার উপস্থিতি সম্পর্কে ভাবার সময়ও তেমনই প্রশ্ন করা উচিত।
### শেষ কথা
ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ও অভিনেত্রী আনুশকা শর্মার উদাহরণ নিন। তারা সন্তানের ছবি বা তথ্য প্রকাশ না করেই নিজেদের সন্তানদের গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন। ডিজিটাল যুগে এমন উদাহরণ অনুসরণ করাই ভালো।
অন্যদের অতিরিক্ত ছবি কিংবা তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক করতে ভুলবেন না। অধিক শেয়ারিং আপনার সন্তানের স্বাভাবিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই, সন্তানের সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করার আগে ভবিষ্যতের কথা ভাবুন এবং পরবর্তী সময়ের ফলাফল বিবেচনা করুন।